- বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে ব্যাপক তল্লাশি
লণ্ডন, ৩০ এপ্রিল: বৈধ কাগজপত্র নেই এমন অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযানের আগাম ঘোষণা দিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইলিগ্যাল মাইগ্রেশনের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে হোম অফিসের ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি। এতে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কাজ করা অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড়সহ নিয়োগকর্তাদের জরিমানা ও শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানো অভিবাসীরা।
চলমান এ অভিযানে লণ্ডনের নরফোকে অবস্থিত ‘রাজ অন ব্রিজ স্ট্রিট’ নামের একটি রেস্টুরেন্টসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর হোম অফিসের ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির কর্মকর্তারা ‘রাজ অন ব্রিজ স্ট্রিট’ এ অভিযান চালায়। রেস্টুরেন্টটিতে কর্মরত চারজন কর্মীর মধ্যে দুজনই অবৈধ অভিবাসী ছিলেন। তদন্তে এই অবৈধ কর্মীদের শোষণের বিষয়টি উঠে এসেছে। কর্মীরা এখানে মডার্ন স্লেভারির শিকার হতো বলে তদন্তে উঠে এসেছে। বেআইনি কাজ করায় হোম অফিস রেস্টুরেন্ট লোকেশনের লাইসেন্স বাতিল করার সুপারিশ করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ৩০শে এপ্রিল হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় ইমিগ্রেশন পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক তল্লাশি করেছে। বৈধ কাগজপত্রের তল্লাশি থেকে রেহাই পাননি সাধারণ পথচারীরাও। মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ করে হোয়াইট চ্যাপেল এলাকা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে ইমিগ্রেশন পুলিশ। প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী এই অভিযানে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযান চলাকালীন সময়ে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে এসময় অবৈধ অভিবাসীদের অনেককে দৌঁড়ে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে।
অভিযানে হোয়াইট চ্যাপেলের বিভিন্ন জায়গায় শতাধিক ইমিগ্রেশন পুলিশ অংশ নিয়েছে। রাস্তাঘাটের প্রায় সকল পয়েন্ট বন্ধ করে বর্ডার এজেন্সি বিভিন্ন অফিস, দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট ও খোলা জায়গার স্টলগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে বর্ডার এজেন্সি অত্যাধুনিক ফেইস রিকোগনিশন ক্যামেরা ব্যবহার করেছে।
যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে ইউকে বর্ডার এজেন্সির এই ঘন ঘন তল্লাশি অভিযান ইমিগ্রেশন কমিউনিটিকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এমন সাড়াশি অভিযানকে অমানবিক বলে ‘গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্ডারস ফোরাম’ এবং ‘গ্লোবাল বাংলাদেশি অ্যালায়েন্স ফর হিউম্যান রাইটস’সহ কমিউনিটির বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের প্রস্তাবিত বহুল আলোচিত-সমালোচিত রুয়ান্ডা বিল বিরোধী দলগুলোর তীব্র আপত্তির পরও পাশ হয়েছে। চুক্তিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের সরকারের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা নেওয়ার বিনিময়ে পাঁচ বছর দেশটিতে অভিবাসন প্রত্যাশীদের জায়গা দেবে রুয়ান্ডা। পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসন বাবদ সরকার বাড়তি অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে রুয়ান্ডার উদ্দেশ্যে প্রথম ফ্লাইট ছেড়ে যেতে পারে বলে জানা গেছে। এই বিলের মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারী কেউ এখানে অবস্থান করতে পারবেন না। এই বিল পাস হওয়ার পর ইউকে বর্ডার এজেন্সির অভিযান যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদিকে রুয়ান্ডা বিলকে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অমানবিক হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।