- শহীদ আবু সাঈদকে ক্ষুদিরামের সঙ্গে তুলনা।
পশ্চিমবঙ্গ নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমর্থনে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (এআইডিএসও) এর ব্যানারে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র সংগঠনসহ বিবেকবান বাঙালিরা । কিন্তু সেখানেও পুলিশি বাধার মুখে পড়েন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে জমায়েতের ডাক দেয় অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন।
ছাত্র সংগঠনগুলি এ দিন রবীন্দ্র সদন চত্বর থেকে মিছিল শুরু করে। আন্দোলনকারীরা বাংলাদেশের নিরপরাধ ছাত্রদের মৃত্যুর বিচার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানাতে থাকেন। রবীন্দ্র সদন চত্বরেই পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করেছিল। ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করতেই পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি বাধে। মোট ৭০ জনকে গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মধ্য কলকাতার পার্ক সার্কাস ময়দানে প্রায় এক ঘণ্টা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন সংগঠনটির সদস্যরা। কর্মসূচির অন্যতম অংশ ছিল কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে স্মারকলিপি প্রদান। কিন্তু এতে বাধা দেয় পুলিশ। এসময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তর্কে জড়াতে দেখা যায় পুলিশকে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে সড়কেই কর্মসূচি পালন করা হয়।
এআইডিএসও-র কলকাতা জেলা সম্পাদক মিজানুর রহমানের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বাংলাদেশে সরকারের হাতে ছাত্ররা শহীদ হচ্ছেন। সেই মৃত্যুর বিচার চেয়ে কলকাতায় শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন হচ্ছে, কিন্তু তা আটকে দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ।” অন্য এক বিক্ষোভকারীর বলেন, “এখানে বাংলাদেশের অনেক বন্ধু রয়েছেন। তাঁরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।”
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে ঐতিহাসিক হিসেবে আখ্যায়িত করে সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি মনিশংকর পট্টনায়ক বলেন, ‘সরকার গণহত্যার মাধ্যমে আন্দোলন দমন করতে চাইছে।’
সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের শাসকশ্রেণি একে অন্যের সহায়ক। অন্যদিকে দুই দেশের ছাত্রসমাজের স্বার্থ অভিন্ন। শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে ছাত্রদের লড়াইকে আমরা সমর্থন ও সংহতি জানাই।’
এআইডিএসও’র রাজ্য কমিটির সদস্য অপর্না ওঝা বলেন, বাংলাদেশে আজকে ছাত্র আন্দোলনের ঢেউ উঠেছে। গোটা বাংলাদেশজুড়ে কোটা সংস্কার বিরোধী আন্দোলন চলছে। সেই আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এবং পুলিশ প্রশাসন যেভাবে ন্যায়সঙ্গত ছাত্র আন্দোলন ও কোটা আন্দোলনকারীদের উপর যেভাবে আক্রমন চালিয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। এরই মধ্যে আমরা জানতে পেরেছি ছয়জন ছাত্র শহীদ হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে, শহীদ ছাত্রদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা এআইডিএসও’র পক্ষ থেকে সংহতি মিছিল করেছি।
এআইডিএসও’র রাজ্য কমিটির সদস্য গৌরব ঘোষ বলেন, বাংলাদেশে যে অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি রয়েছে, তার বিরুদ্ধে উত্তাল বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা। বাংলাদেশের প্রায় সব কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে নেমেছে। গৌরব আরও বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ, বিক্ষোভকারীদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। এতে এখন পর্যন্ত ছয়জন শহীদ হয়েছেন। পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও প্রায় হাজার জন। বুধবার (১৭ জুলাই) রাতেও আমরা খবর পেয়েছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ আক্রমণ চালিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে সুর চড়িয়ে গৌরব ঘোষ বলেন, বাংলাদেশে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে ও শহীদদের লাল সালাম জানাতেই আজ আমাদের এই প্রতিবাদী মিছিল। মিছিলটা শুরু করার পরেই পুলিশ আমাদের আটকে দিয়েছে, তবে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত আসতে পেরেছি। এখানে পুলিশ জোর করে আমাদের আটকে দিয়েছে, তাই এখানে বসেই আমাদের প্রতিবাদ চলছে।
বাংলাদেশের এই আন্দোলন গোটা ছাত্র সমাজের জন্যই এক বড় দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে অভিমত দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিরা। এছাড়া শুধু কলকাতা নয়, গোটা পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছেন তারা।
বিক্ষোভ শেষে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ দূতাবাসে তাদের প্রতিবাদলিপি পৌঁছে দেন। বিষয়টি সুরমা‘কে নিশ্চিত করেছেন কলকাতার বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের প্রথম সচিব রঞ্জন সেন। তিনি বলেন, কয়েকজন শিক্ষার্থী দূতাবাসে এসে তাদের বক্তব্য জানিয়ে একটি স্বারকলিপি দিয়ে গিয়েছে।
শহীদ আবু সাঈদকে ক্ষুদিরামের সঙ্গে তুলনা
ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করতে ফাঁসিকাষ্ঠে জীবন দিয়েছিলেন ক্ষুদিরাম বসু। তার এই আত্মবলিদান পরে অসংখ্য তরুণ-যুবককে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত হতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকালে পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্র আবু সাঈদকে ক্ষুদিরামের সঙ্গেই তুলনা করছেন অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের সদস্যরা। তারা বলছেন, আবু সাঈদ যেভাবে পুলিশের বন্দুকের সামনে বীরের মতো বুক পেতে দিয়েছেন, স্বাধীনতাকামী সকলের জন্য তা নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণার।
প্রসঙ্গত কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে পশ্চিমবঙ্গে এটিই প্রথম সংহতি কর্মসূচি। শুক্রবার আরও একটি মিছিল করেছেন কলকাতার শিক্ষার্থী এবং মানবাধিকার কর্মীরা। এআইডিএসও-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় এই ঘটনার নিন্দা করে জেলা জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। একই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ‘শহীদবেদি’ তৈরি ও ধিক্কার মিছিলের ডাক দিয়েছেন।