তারেকুর রহমান, কক্সবাজার: শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব পর্যটন দিবস। প্রতি বছরের মতো এ বছরও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘টুরিজম অ্যান্ড পিস’, অর্থাৎ ‘পর্যটন শান্তির সোপান’। প্রতিপাদ্যে শান্তির বার্তা থাকলেও দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এমনিতে এই শহরে কিছুদিন ধরে পর্যটকের মন্দা ছিল। গত জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে অনেকটা পর্যটক শূন্য ছিল কক্সবাজার। গত দুই সপ্তাহ ধরে পর্যটকরা আসতে শুরু করলেও নিরাপত্তা নিয়ে অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন তারা।
দেশের নানা প্রান্ত থেকে কর্ম ব্যস্ততা ফেলে মানুষ একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে ছুটে আসেন সমুদ্রশহর কক্সবাজারে। অবকাশ যাপনের জন্য কক্সবাজার সর্বোচ্চ শান্তির জায়গা এই মনোভাব থেকে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় সবার ওপরে থাকে এই শহরের নাম। তবে সম্প্রতি কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা পর্যটকদের আতঙ্কিত করেছে।
কুমিল্লা থেকে বেড়াতে আসা সাজেদুল ইমন বলেন, ‘সমুদ্র সৈকতের বিশৃঙ্খলা ও আতঙ্ক দূর করতে পারে পুলিশ। সমুদ্রসৈকতের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পুলিশ দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করছে। কক্সবাজারে এসে দেখছি সৈকতের কোথাও পুলিশের কোনো টহল নেই, যা খুবই ভীতিকর।’
সন্ধ্যায় সমুদ্রসৈকতে হাঁটতে যাওয়া বন্ধ করেছেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা এবং কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য অ্যাডভোকেট প্রতিভা দাশ। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় একা এবং পরিবার নিয়েও দেশে এবং দেশের বাইরে ঘুরতে যাই। বিদেশে পর্যটকদের নিরাপত্তার যে ব্যবস্থা তার কাছাকাছিও কক্সবাজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। পর্যটকদের যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশাসনের দেওয়ার কথা তারা সেটা দিতে ব্যর্থ। কক্সবাজার বা বাংলাদেশের যেখানেই ঘুরতে যাই নিজের সম্ভ্রমহানির ভয় থাকে। নিরাপত্তা নিয়ে ভাববো- নাকি নিজেকে প্রকৃতির সঙ্গে যোগ করবো সেটা নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়।’
এই সংকট থেকে এবং নিরাপত্তাহীনতা থেকে যদি কক্সবাজারকে বের করা না যায় তাহলে পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজার থেকে পর্যটক বিমুখ হবে বলেও জানান তিনি।
ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারী ট্রাভেল গ্রুপের এক সদস্য বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নারীরা বর্তমানে বেড়াতে যেতে ভয় পাচ্ছে। বিশেষ করে কক্সবাজারে আসতে। মানুষ কোথাও বেড়াতে যায় একটু স্বস্তির জন্য বা কাজের চাপ থেকে নিজেকে আলাদা রাখার জন্য। কক্সবাজারে এসে শান্তির বদলে বিরক্ত হতে হয়। অবকাশ যাপনের জন্য কিটকট চেয়ারে একটু আরাম করার সময় কয়েক মিনিট পর পর চানাচুর, চিপস, পানি, পান-সিগারেট এবং কিটকট ছাতা ব্যবসায়ীদের টানাটানির শিকার হতে হয়। এই পরিস্থিতি সমাধান না হলে কক্সবাজারের পরিবর্তে অন্য জায়গা বেছে নেবেন পর্যটকরা।’
শহরের তারকা মানের হোটেল কক্স টুডে’র জেনারেল ম্যানেজার আবু তালেব শাহ বলেন, ‘কক্সবাজারের যে সৌন্দর্য আছে, তা দেশের বাইরে আমরা এখনো তুলে ধরতে পারেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার ওপরই এ খাতের ভবিষ্যত নির্ভর করছে।’
গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর কক্সবাজারে বিশেষ করে সমুদ্রসৈকতে আইনশৃঙ্খলা অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেকে। এ কারণে সৈকতে এবং হোটেল-মোটেল জোনেও পর্যটকদের সঙ্গে ঘটছে বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিছুদিন আগে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এক নারীকে কান ধরিয়ে উঠবস ও মারধর করার একটি ভিডিও ভাইরাল হলে এর প্রভাব পড়ে কক্সবাজারের পুরো পর্যটন খাতে। এই সংকট কাটাতে প্রশাসনের বড় ভূমিকা রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল।
কক্সবাজারের পর্যটন সেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গনি ওসমানী বলেন, ‘সারা দেশের মতো কক্সবাজারেও সংকট চলছে। এটি সমাধানের চেষ্টা করছে প্রশাসন। একই সঙ্গে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুবিধা বাড়াতে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও কথা হচ্ছে। এরই মধ্যে কক্সবাজারে যে কয়েকটি ছিনতাই এবং সৈকতে নারী হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। এই বিষয় প্রশাসন কঠোরভাবে হস্তক্ষেপ করেছে। এসব যেন আগামীতে আর না ঘটে সে দিকেও কঠোর নজর রাখছে প্রশাসন।’
এই মুহূর্তে কক্সবাজার পর্যটকদের জন্য নিরাপদ এবং তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে বলেও জানান জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘দেশজুড়ে রাষ্ট্র সংস্কার চলছে। বর্তমানে কক্সবাজারে অধিকাংশ কর্মকর্তা নতুন। আমরা পরিকল্পিতভাবে কক্সবাজারকে সাজাতে চাই। যাতে পুরো বিশ্বে কক্সবাজারের নাম আরও সমৃদ্ধ হয়।’