শিরোনাম
শুক্র. ডিসে ৫, ২০২৫

টিউলিপের ৪ বিলিয়ন পাউন্ড বখরা নিয়ে ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন

  • মোট ১০ বিলিয়ন ডলারের পারমাণবিক চুক্তির দালালি’র তদন্ত করছে ব্রিটেন

লণ্ডন, ১৮ ডিসেম্বর- যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৪০০ কোটি পাউন্ড পর্যন্ত ঘুষ নেয়ার অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতে দুর্নীতিরোধের দায়িত্ব রয়েছে সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের কাঁধে। বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির সাথে জড়িত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে।


বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিউলিপ সিদ্দিক, তার যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী মা শেখ রেহানা সিদ্দিক এবং তার খালা বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে শাসন করা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক গণমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক সপ্তাহের সহিংস বিক্ষোভের পর বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী শত শত বেসামরিক লোককে হত্যা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাসিনা তার বোন রেহানাকে নিয়ে আগস্টে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যান। বাংলাদেশের হাইকোর্টের আদেশের পরে তদন্ত শুরু করা হয়। সেখানে দাবি করা হয়, টিউলিপ সিদ্দিক মোট ১০ বিলিয়ন ডলারের পারমাণবিক চুক্তির ‘দালালি’ করতে সহায়তা করেছিলেন।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে রোসাটম নামে একটি রাশিয়ান রাষ্ট্র-সমর্থিত কোম্পানি কাজ করছে। ২০১৩ সালে শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন টিউলিপ সিদ্দিকের উপস্থিতিতে ক্রেমলিনের অভ্যন্তরে চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন। টিউলিপ তখন একজন লেবার কাউন্সিলর ছিলেন। দুদক টিউলিট সিদ্দিকের পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করছে। যার মধ্যে তার খালাতো ভাই সজীব ওয়াজেদ জয়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন এবং তার চাচা তারিক সিদ্দিক, যিনি বাংলাদেশে লুকিয়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আদালতের কাগজপত্রে তাদের নাম ছিল। দুদকের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘কমিশন জড়িতদের অবস্থান নির্বিশেষে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তবে টিউলিপ সিদ্দিক এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, মার্কিন ওয়েবসাইটে প্রথম প্রকাশিত হওয়া অভিযোগগুলো ‘ভুয়া’।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্যের সাধারণ সম্পাদক এবং টিউলিপ সিদ্দিকের পারিবারিক বন্ধু সৈয়দ ফারুক বলেন, ‘এই গল্পগুলো বানোয়াট। তিনি বলেন, ‘এগুলো বর্তমান সরকারের শতভাগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে হামলা। তারা টিউলিপকে আক্রমণ করছে কারণ সে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি।’
জুলাই মাসে সিটি মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে টিউলিপ সিদ্দিককে ঘিরে ঘুষের তদন্ত হলো বিতর্কিত একটি বিষয়। তিনি প্রায় ১৪ মাস ধরে লন্ডনের একটি সম্পত্তির ভাড়ার আয় ঘোষণা করেননি বলে সংসদীয় মানদণ্ড মেনে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছিল। সংসদীয় নিয়ম অনুসারে সদস্যদের ২৮ দিনের মধ্যে এই জাতীয় আয় ঘোষণা করতে হবে। ঢাকা থেকে ১২৮ মাইল উত্তর-পশ্চিমে ঈশ্বরদী উপজেলায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তিটি ২০১৩ সালে ক্রেমলিনে একটি জমকালো অনুষ্ঠানে হাসিনা ও পুতিনের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেখানে টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা রেহানা ও ছোট বোন আজমিনা উপস্থিত ছিলেন। টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবার এমনকি পরে রাশিয়ান রাষ্ট্রনেতার সাথে ছবিও তোলেন। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প নামে মার্কিন-ভিত্তিক নিউজ ওয়েবসাইটের রূপপুরবিষয়ক নিবন্ধের প্রকাশের পর বাংলাদেশী গণমাধ্যমগুলোও সেটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। যেখানে টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের সদস্যদের চার বিলিয়ন পাউন্ড কিভাবে চুরি করা হয়েছিল তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। নথিতে বলা হয়েছে, সিদ্দিক, হাসিনা ও তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মধ্যস্থতার বিনিময়ে আত্মসাৎকৃত তহবিলের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন। এমনকি দাবি করা হয়েছে, প্রচ্ছয়া লিমিটেড নামের একটি ‘ভুয়া’ কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ৭০৯ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত পাচার করা হয়েছে ‘যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে’। হাসিনার শাসনের বৈশিষ্ট্য ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের গুম করা। অ্যামনেস্টির মতো গ্রুপ তাদের প্রতিবেদনে হাসিনা সরকারের অপব্যবহারের কথা তুলে ধরেছে।
হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি অন্যান্য দুর্নীতির বিষয়ে আদালতে বিভিন্ন কাগজপত্র দাখিল করা হয়েছে। টিউলিপ অতীতে তার খালা হাসিনাকে একজন ‘রোল মডেল’ হিসেবে প্রশংসা করেছেন, কিন্তু আগস্টে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি টিউলিপ। তার খালার কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাথে অর্থমন্ত্রী টিউলিপের সম্পৃক্ততা এক দশকেরও বেশি পুরোনো, কারণ এরপর তিনি বৃটিশ মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন।
উইট ইস্টের টোরি এমপি জো রবার্টসন বলেছেন, ‘এটি স্পষ্ট যে অভিযোগ গুরুতর, এখানে মন্ত্রী টিউলিপের সম্পৃক্ততা কতখানি ছিল তা জানা প্রয়োজন। গুরুতর তদন্তের অধীনে থেকেও সিদ্দিক কি তার মন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন?’
ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে অস্ত্র চুক্তি এবং একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে স্বাক্ষর করার সময় একটি সরকারি প্রতিনিধি দলের ভিডিও প্রকাশের পরে নগর মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক নতুন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। ভিডিওতে টিউলিপ সিদ্দিককে ক্রেমলিনে তার খালা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি দলের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। ২০১৩ সালের অনুষ্ঠানে পুতিন এবং তার খালার সাথে টিউলিপ উপস্থিত ছিলেন। ওই সময়ে লেবার জোর দিয়ে বলেছিল, টিউলিপ সিদ্দিক কোনো সরকারি প্রতিনিধিদলের অংশ ছিলেন না, তার পরিবারের সাথে একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন।
ভিডিওতে দেখা গেছে, টিউলিপ সিদ্দিক ও তার বোন আজমিনা বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তাদের খালার পেছনে হাঁটছেন। একজন লেবার মুখপাত্র এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এটি টিউলিপ এমপি হওয়ার ১১ বছর আগের ঘটনা। টিউলিপ শুধুমাত্র তার খালাকে দেখতে এবং তার পরিবারের সাথে সময় কাটাতে রাশিয়া গিয়েছিলেন। পারিবারিক সদস্য হওয়ায় তিনি যেকোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, তাতে তার কোনো ভূমিকা ছিল না।’
তবে টোরি দলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘এটি টিউলিপ সিদ্দিকের তথাকথিত পারিবারিক মস্কো সফরের পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করে। এক দশকেরও বেশি সময় পরে অবশেষে সিদ্দিকের রাশিয়া সফর এবং এই ছবির পেছনের সত্য উদ্ঘাটনের সময় এসেছে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *