শিরোনাম
বৃহঃ. ডিসে ৪, ২০২৫

টাওয়ার হ্যামলেটস সফর করলেন ভ্যালেরি টেইলর

লন্ডন, ০৯ আগস্ট- বিশ্বখ্যাত মানবাধিকার কর্মী, সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি), বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিবিই খেতাবে ভূষিত ভ্যালেরি টেইলর সম্প্রতি লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সফর সম্পন্ন করেছেন। এটি ছিল শুধু একটি প্রথাগত সফর নয়; বরং মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি, শিক্ষা এবং কমিউনিটি ক্ষমতায়নের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

ভ্যালেরি টেইলর, যিনি গত প্রায় পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশের অসংখ্য শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনে আলোর ঝর্ণাধারা হয়ে কাজ করে চলেছেন, এই সফরের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের বাঙালি কমিউনিটির সঙ্গে আরও একটি দৃঢ় বন্ধনের সূচনা করলেন। ভ্যালেরি টেইলর তাঁর সফর শুরু করেন টাওয়ার হ্যামলেটসের মন্টেফিওরে সেন্টারে। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান সমাজকর্মী ও শিক্ষাবিদ জামাল আহমেদ এবং তাঁর সহকর্মীরা। তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ঐতিহ্যবাহী বাঙালি রীতিতে বরণ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় কমিউনিটির প্রতিনিধিরা, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার সদস্যরা। এরপর ভ্যালেরি যান হ্যামলেটস ট্রেনিং সেন্টারে, যা জামাল আহমেদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে ইংরেজি ভাষা শেখানো, ‘লাইফ ইন দ্য ইউকে’ প্রস্তুতি কোর্স এবং বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অভিবাসীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে সহায়তা করে আসছে। কেন্দ্রের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত হয়ে ভ্যালেরি টেইলর বলেন, “আমি সত্যিই বিস্মিত হয়েছি এই কেন্দ্রের কার্যক্রম দেখে। এখানে শুধু ভাষা শেখানো হয় না, শেখানো হয় আত্মবিশ্বাস, শেখানো হয় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কৌশল। আমি জামাল আহমেদ এবং তাঁর দলের কাজের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। এই ধরনের উদ্যোগ সমাজে একটি স্থায়ী প্রভাব ফেলে, যা আমরা সবাইকে অনুপ্রাণিত করতে পারে।” তিনি আরও বলেন: “বাংলাদেশে আমি সবসময় চেষ্টা করেছি প্রতিবন্ধীদের শুধু চিকিৎসা নয়, পুনর্বাসন ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন দেওয়ার জন্য। এখানে এসে বুঝলাম, টাওয়ার হ্যামলেটসের এই কমিউনিটিও একই স্বপ্ন লালন করে, যা আমাকে আরও আশাবাদী করে তুলেছে।”

একটি ছোট কিন্তু অর্থবহ অনুষ্ঠানে, জামাল আহমেদ ভ্যালেরি টেইলরকে তাঁর অবিস্মরণীয় মানবিক অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একটি সম্মাননাপত্র প্রদান করেন। এই সম্মান তাঁর প্রতি একটি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে, তাঁর জীবনের লক্ষ-কোটি মানুষের ছোঁয়া লাগা কাহিনীর প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা নিবেদন। জামাল আহমেদ বলেন: “ভ্যালেরি টেলর কেবল একজন চিকিৎসক বা সমাজকর্মী নন, তিনি মানবতার এক অবিচল প্রতীক। তাঁর মতো মানুষ আমাদের পৃথিবীকে আরও বাসযোগ্য করে তোলে। তাঁর সঙ্গে আমাদের আজকের এই সময় কাটানো, আমাদের জন্য এক বিশাল প্রাপ্তি।” তিনি আরও যোগ করেন: “আমাদের হ্যামলেটস ট্রেনিং সেন্টারে আমরা চেষ্টার কোনও ঘাটতি রাখি না। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে, আমাদের এই কাজগুলোকে আন্তর্জাতিক পরিসরে মূল্যায়ন করা হচ্ছে—এটা আমাদের জন্য গর্বের।”

সফরের দ্বিতীয় অংশে, ভ্যালেরি টেলর ও তাঁর প্রতিনিধিদল যান টাওয়ার হ্যামলেটস টাউন হলে। সেখানে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান কাউন্সিলের স্পিকার, কাউন্সিলর সুলুক আহমেদ এবং তাঁর টিম। তাঁকে পার্লার রুমে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং এক সংক্ষিপ্ত সৌজন্য বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে ভ্যালেরির কাজ, বিশেষ করে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনে তাঁর অসামান্য অবদান এবং সমাজের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার নিয়ে আলোচনা হয়। কাউন্সিলর সুলুক আহমেদ বলেন, “ভ্যালেরি টেলর শুধু একজন ব্যক্তি নন—তিনি একটি প্রতিষ্ঠান, একটি আন্দোলন, একটি অনুপ্রেরণা। তাঁর চোখে যে করুণা আর মমত্ববোধ দেখা যায়, তা মানুষকে মানবতার প্রতি বিশ্বাসী করে তোলে। টাওয়ার হ্যামলেটসের জনগণের পক্ষ থেকে আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।” তিনি আরও বলেন “টাওয়ার হ্যামলেটস হলো ব্রিটেনের অন্যতম বহুজাতিক ও বহুসাংস্কৃতিক অঞ্চল। আমরা গর্বিত যে ভ্যালেরির মতো একজন মহান মানুষ আমাদের অতিথি হয়েছেন। তাঁর মতো মানুষের সফর আমাদের কমিউনিটিকে অনুপ্রাণিত করে, আরও ভালো করার সাহস দেয়।”

সফরে ভ্যালেরির সঙ্গে ছিলেন ভ্যালেরি টেলর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান জনাব মোখতার হোসেন, দাতা সু ওয়েটস, কোষাধ্যক্ষ সৈয়দুল খালেদ, সমাজকর্মী শিরাজ দুররানী, শিক্ষাবিদ জামাল আহমেদ এবং ক্যাপিটাল কিডস-এর প্রধান নির্বাহী শাহিদুল আলম রতন। সফরের শেষে, কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ভ্যালেরিকে একটি বিশেষ ক্রেস্ট উপহার দেওয়া হয়—তাঁর সিবিই সম্মানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। এরপর তাঁকে টাউন হলের বিভিন্ন অংশ, বিশেষত প্রধান সভাকক্ষ, পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হয়।

সফরের শেষভাগে নিজের অনুভূতি জানিয়ে ভ্যালেরি বলেন: “আমি এই সফরের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। টাওয়ার হ্যামলেটসের মানুষ আমাকে যে ভালোবাসা ও সম্মান দিয়েছেন, তা আমি হৃদয়ের গভীর থেকে অনুভব করেছি। আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষা, সহযোগিতা ও কমিউনিটির শক্তি দিয়ে আমরা আরও অনেক দূর যেতে পারি। বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের এই বন্ধন যেন আরও দৃঢ় হয়, এই কামনা করি।”

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *