করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে স্থবিরতা নেমেছে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে। জাতীয় নাট্যশালায় হচ্ছে না নাটকের প্রদর্শনী। আয়োজন করে হচ্ছে না কোনো সঙ্গীতের আসর বা কবিতার আড্ডা। এ অবস্থায় সচেতনতার মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা।
সোমবার (০৮ জুন) সংস্কৃতি অঙ্গনের বিভিন্ন কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমনটাই। তাদের অভিমত, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই যেন পুরনো রূপে ফেরে সংস্কৃতি অঙ্গন।
টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠছে রাজধানীসহ সমগ্র দেশ। সে সঙ্গে খুলে গেছে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের কেন্দ্রবিন্দু শিল্পকলা একাডেমি। গত ৩১ মে থেকে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড শুরু হলেও এখনও কোনো অনুষ্ঠান হয়নি সেখানে। আর করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বাংলানিউজকে বলেন, এটা আসলে এককভাবে শিল্পকলা একাডেমির সিদ্ধান্ত না। রাষ্ট্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যখন মনে হবে পরিস্থিতি ঠিক হয়েছে তখন আমরা মিলনায়তন ভাড়া দেবো। সেখানেও শারীরিক দূরত্ব পালন করেই দেওয়া হবে। তবে সে সময়টি এখনও এসেছে বলে আমি মনে করি না।
‘আসলে এখন কোনো অনুষ্ঠান করে লাভও নেই। কারণ আমরা নাটক বা কোনো অনুষ্ঠান তো করবো দর্শকদের জন্য। তারাই যদি না থাকেন তাহলে সে আয়োজন করে তো কোনো লাভ নেই।’
তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনিক কাজও কিন্তু ডিজিটালি করছি। বিশেষ কোনো সভা না হলে আমরা অনলাইনে সভা করছি। অনলাইনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণও চলছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশে নাট্য প্রদর্শনীসহ নাট্যদলগুলোর আয়োজনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মহড়া বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন।
নাট্যদলগুলোর নেতৃত্ব দেওয়া গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজিদ বলেন, সারাদেশে নাট্যশিল্পীদের আমরা আহ্বান জানিয়েছি, এই পরিস্থিতিতে নাট্য প্রদর্শনী, মহড়া এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান আয়োজন না করতে। সবার আগে তো মানুষের জীবন।
একই অবস্থা বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের। সাধারণ ছুটি শেষে খুলেছে জাদুঘর। প্রশাসনিক কাজ শুরু হলেও জাদুঘরের গ্যালারি এখনো উন্মুক্ত নয় সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরই রাজধানীর জাদুঘর খুলবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. শওকত আলী।
এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এই মুহূর্তে সঠিক বলা যাচ্ছে না জাদুঘর সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য কবে খুলে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে এবং সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই পরবর্তীতে জাদুঘর সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
এছাড়া জনসমাগম তৈরি হয় এমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন না করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সারাদেশে সদস্যভুক্ত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশে জনসমাগম তৈরি হয় এমন সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠনকে অনুরোধ জানাই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোনো আয়োজন করা ঠিক হবে না।