ভোটের আগে আবারও নতুন করে সমস্যায় পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। দুর্গাপুর ব্যারেজের গেট ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে আবারো সরগরম হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। গত তিন বছর আগে ২০১৭ সালের দুর্গাপুর ব্যারেজের গেট ভাঙ্গা নিয়ে যেখানে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করেছিলেন বিরোধীরা, সেখানে সেই ব্যারেজ সংস্কারের কাজ চলার মাঝেই আবারও দুর্গাপুর ব্যারেজের গেট ভেঙে যাওয়ায় নতুন বিপদের মুখে পড়েছে প্রশাসন।
বস্তুত ২০১৯ সালের মে মাসে বাঁকুড়ার বড়জোড়া নির্বাচনে প্রচারে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন রাজ্য সরকার ১৪০ কোটি টাকা খরচ করে ব্যারেজ সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। এবং সেই কথা মতো কাজও শুরু হয়েছিল দুর্গাপুর ব্যারেজের। তবে সম্প্রতি সেই ব্যারেজের গেট আবারও ভেঙে যাওয়ায় বিপত্তি দেখা গেছে।
এবিষয়ে, দুর্গাপুর পশ্চিম তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল বলেছেন, এই বিষয় নিয়ে অযথা রাজনীতি করে কোন লাভ নেই। ২০১৭ এর বিপত্তির পরে রাজ্য সরকার ব্যারেজের বাকি গেট বদল এবং সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই কাজ শুরু হয়েছিল ধাপে ধাপে। কিন্তু তা শেষ হবার আগেই এমন বিপত্তি ঘটেছে। এক্ষেত্রে দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতা উত্তম মুখোপাধ্যায়ও একই কথা বলেছেন বলে জানা যায়।
অন্যদিকে ১৯৫৫ সালে গড়ে ওঠা এই দুর্গাপুর ব্যারেজ এতদিন কেন সংস্কার হয়নি সেই নিয়েও প্রশ্ন করতে দেখা গিয়েছিল সিপিএমের রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে। দুর্গাপুরের পূর্ব সিপিএম বিধায়কের কথায়, ২০১৬ থেকে দুর্গাপুরের ব্যারেজ সংস্কারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, জলসম্পদ মন্ত্রি সহ সবার দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেভাবে কেউ এ বিষয়ে মাথা ঘামাননি।
আর এর ফলেই সাধারণ মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আসলে সরকার জোড়াতালি দিয়ে কাজ করেছে যাতে কোনো লাভ হয়নি। তাই নতুন গেট লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক এমনটাই জানানো হয়েছিল। তবে সম্প্রতি দুর্গাপুর ব্যারেজের গেট ভেঙে যাওয়ার ঘটনায় রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করেছেন বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার।
এদিন শাসক দলকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, তিন বছর আগে একবার এমন বিপত্তি ঘটেছিল। কিন্তু তারপর এতটা সময় পাওয়ার পরেও কেন এমন ঘটনা ঘটলো, সে জবাব দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। তবে ভোটের মুখে রাজ্য সরকারের এহেন অবস্থা যে সাধারণ মানুষের কাছে তৃণমূলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে সে কথা আলাদা করে বলে দিতে হবে না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দামোদরের বন্যা থেকে অবিভক্ত বর্ধমান, বাঁকুড়া ও হুগলির নিম্ন দামোদর এলাকাকে বাঁচাতে আমেরিকার ‘টেনেসি ভ্যালি অথরিটি’ টিভিএ এর অনুকরণে ১৯৪৮ সালের ৭ই জুলাই দেশের প্রথম রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিসেবে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন বা ডিভিসি গড়ে উঠেছিল।
এটি বন্যা প্রতিরোধ ছাড়াও সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, বিদ্যুত্ উত্পাদন ও শিল্পস্থাপন করবে বলেই জানানো হয়। বস্তুত এগুলোই ছিল ডিভিসি-র লক্ষ্য। সেক্ষেত্রে মাইথন, তিলাইয়া, তেনুঘাট, পাঞ্চেত ও কোনারে বাঁধ তৈরি হয়। তবে দুর্গাপুরেই ১৯৫৫ সালে একমাত্র ব্যারেজটি গড়ে তোলা হয়।