রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালানোর দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা দায়ের করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। এবার সহায়তার জন্য এই মামলায় যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে কানাডা ও নেদারল্যান্ডস।
বুধবার কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাসোঁয়া ফিলিপে শ্যাম্পে এবং নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টেফ ব্লক এক যৌথ বিবৃতিতে একথা জানান।
বিবৃতিতে দেশ দুটি জানায়, তারা মামলার জটিল আইনি বিষয়গুলোতে সহায়তা করবে এবং ধর্ষণসহ যৌন হয়রানি ও নারী নির্যাতনের মতো অপরাধগুলোতে বিশেষ মনোযোগ দেবে।
রোহিঙ্গা গণহত্যা বিষয়ক মামলায় সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য কানাডা ও নেদারল্যান্ডসের আগ্রহ প্রকাশ করায় মামলাটি নতুন করে গতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে মন্ত্রীদ্বয় বলেন, গণহত্যা কনভেনশন মেনে নেওয়া দেশগুলির গণহত্যা ঠেকানোই শুধু উদ্দেশ্য নয় বরং যারা এর জন্য দায়ী তাদেরকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনাটাও তাদের দায়িত্ব।
এই বিবৃতিতে গাম্বিয়াকে সমর্থন দেওয়ার জন্য গণহত্যা কনভেনশন মেনে নেওয়া দেশগুলিকে কানাডা ও নেদারল্যান্ডস পুনরায় আহবান জানায়। মিয়ানমারের গণহত্যাকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে গাম্বিয়া অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ করেছে বলেও উল্লেখ করা হয় তাতে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই কাজে সহায়তা করা দায়িত্ব মনে করে কানাডা ও নেদারল্যান্ডস। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় আইনী বিষয়ে দেশ দুইটি সহায়তা করবে এবং বিশেষ করে যৌন নিপীড়ন ও নারী নির্যাতনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেবে।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে, এই মর্মে গত বছর গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে। উভয়পক্ষের শুনানির পরে গত জানুয়ারি মাসে কোর্ট একটি অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেয়। আদেশে মিয়ানমারকে গণহত্যা বন্ধের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে গাম্বিয়ার পাশাপাশি জাতিসংঘের আদালতে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব করতে বিশিষ্ট মানবাধিকার আইনজীবী অমল ক্লুনিকে নিয়োগ দিয়েছে মালদ্বীপ।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গত নভেম্বরে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনে মামলা করে গাম্বিয়া। মামলায় বলা হয়, মিয়ানমার ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক এ আদালতে গণহত্যার দায়ে তৃতীয় মামলা এটি।
গাম্বিয়া ও মিয়ানমার দুই দেশেই ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী হিসেবে শুধু গণহত্যা থেকে বিরত থাকা নয় বরং এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধের জন্য দেশগুলো বিচারের মুখোমুখি হতে বাধ্য।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি সেনা পোস্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাখাইনে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন, নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা এবং নারীদের গণধর্ষণ করা হয়। মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাত লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম।