- যে কারণে ইসরাইলের দিকে তীর।
- যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ।
- শোকে স্তব্ধ ইরান, ৫ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক।
- রাইসির কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করা ভারতীয় গোয়েন্দাকে খুঁজছে পুলিশ।
লণ্ডন, ২১ মে: ১৯ মে রোববার অপ্রত্যাশিতাবে ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। ব্যাপক অনুসন্ধানের পর গত সোমবার পুড়ে যাওয়া হেলিকপ্টার থেকে তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ রক্ষণশীল নেতা রাইসির এই আকস্মিক মৃত্যু ঘিরে ডালপালা মেলেছে নানা গুঞ্জন। ৬৩ বছর বয়সী এই নেতার মৃত্যু নিছকই দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো ষড়যন্ত্র তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
ইরানের সরকারি ভাষ্যে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ হিসেবে এ পর্যন্ত বৃষ্টি ও কুয়াশার মতো খারাপ আবহাওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তবে এই দুর্ঘটনার পেছনে নাশকতা থাকতে পারে বলেও গুঞ্জন উঠেছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এ রকম ধারণার পেছনে কারণও আছে। রাইসির বিতর্কিত শাসনামল এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর মৃত্যুর পেছনে অভ্যন্তরীণ শত্রু, এমনকি ইসরায়েলের মতো ঘোষিত বহিঃশত্রুর সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইরান ও ইসরায়েলের ঐতিহাসিক বৈরিতার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ ইরানিদের অনেকের অনুমান, হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে ইসরায়েলের সংশ্লিষ্টতা থাকতেও পারে। দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। ইকোনমিস্ট বলছে, রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইসরায়েলের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ করার জোরালো কারণ রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি নির্বিচার হামলাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের বৈরিতা সম্প্রতি চরমে উঠেছে। ইরান শুরু থেকেই গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে আসছিল। ইসরায়েলের শত্রু হামাসের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইরান। সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের যুদ্ধে অনেকটা সরাসরিই জড়িয়ে পড়ে দেশটি। সিরিয়ার দামেস্কে কয়েকজন শীর্ষ ইরানি সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার জেরে সরাসরি ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইরান। এসব কারণে রাইসির অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনে ইসরায়েলি ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব হালে কিছুটা হলেও পানি পাচ্ছে।
হেলিকপ্টার প্রযুক্তি ছিলো ইসরায়েলের জানা
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহন করছিল বেল ২১২ মডেলের একটি হেলিকপ্টার। এটি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি। ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতম মিত্র। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র যেমন ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করে, অন্যদিকে সামরিক প্রযুক্তিগত দিকে ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা রয়েছে দেশটির। রাইসিকে বহনকারী ওই হেলিকপ্টারের দুর্বলতাও স্পষ্টতই ইসরায়েলের জানা। সে ক্ষেত্রে নাশকতার বিষয়টিও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ইরানের চিরশত্রু ইসরায়েল কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসরায়েলের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, এ দুর্ঘটনার পেছনে তেল আবিব জড়িত নয়। অন্যদিকে ইসরায়েল বেইতিনু দলের নেতা এম কে আভিগদর লিবারম্যান মন্তব্য করেন, রাইসির মৃত্যুতে এই অঞ্চলে ইরানের নীতির কোনো পরিবর্তন হবে না। এ ঘটনায় তাঁরাও চোখের জল ফেলবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ
ইরানের বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ার ঘটনায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই হৃদয়বিদারক এই ঘটনার অন্যতম কারণ যুক্তরাষ্ট্র। ইরানকে কোনো বিমান বিক্রি করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই কারণে প্রেসিডেন্ট এবং তার সহযোগীদের শহীদ হতে হলো। আমেরিকার এই অপরাধ ইরানের জনগণের স্মৃতিতে এবং ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর ইরানের পক্ষ থেকে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল আমেরিকার কাছ। কিন্তু অভিযোগ করা হচ্ছে ,তাতে রাজি হয়নি যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সোমবার বলেছেন, ‘ইরান সরকার আমাদের সাহায্য চেয়েছিল। ইরান সরকারকে জানানো হয়েছিল যে আমরা সাহায্য করতে প্রস্তুত। যেমনটা আমরা কোনো বিদেশী সরকার সাহায্য চাইলে করে থাকি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লজিস্টিক্সের কারণে আমরা সাহায্য করতে পারিনি।’
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে পারে এই বিষয় নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন কি না? এর জবাবে তিনি জানিয়েছেন, এই হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আমেরিকার কোনো ভূমিকা ছিল না।
রাইসির কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করা ভারতীয় গোয়েন্দাকে খুঁজছে পুলিশ
রাইসির নিহত হবার ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা, অন্তর্ঘাত নাকি শত্রুরাষ্ট্রের পরিকল্পিত আঘাত তা এখনো ইরান নিশ্চিত করেনি। ইরান ও ইসরাইল উভয় রাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ দেশ ভারতের একজন গোয়েন্দা, যিনি হেলিকপ্টারে ওঠার আগে প্রেসিডেন্ট রাইসির কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করছিলেন, সন্দেহ তালিকার সেই ব্যক্তিকেও ইরানি নিরাপত্তা সংস্থা খুঁজছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য প্রচারিত হয়েছে, যদিও এর সত্যতার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রহস্য উন্মোচিত হতে হয়তো সময় লাগবে এবং তারপর বুঝা যাবে পরিস্থিতি কতোটা গুরুতর দিকে মোড় নেবে।