- দুই বোনকে ছাত্রলীগ নেতার রড ও হাতুড়িপেটা
- গাঁজা সেবনে নিষেধ করায় শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও ছাত্রলীগ
- ছাত্রলীগের ওপরে কোনো সন্ত্রাস নাই, কোনো শক্তি নাই: ছাত্রলীগ সভাপতি
ঢাকা, ২১ মে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সোনার ছেলেখ্যাত ছাত্রলীগ নামের দানব সংগঠনের কুলাঙ্গার সন্ত্রাসীরা ২০০৯ সাল থেকে অদ্যাবধি রাজধানী, দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা, থানা, ইউনিয়ন কিংবা গ্রামে খুন, হত্যা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও নারী ধর্ষণের মতো কোন না কোন ঘটনা ঘটিয়েই যাচ্ছে।
সম্প্রতি পাবনায় গাছের ডাল কাটাকে কেন্দ্র করে চাটমোহর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আলিফ ইয়ামিন পায়েল যমজ দুই বোনকে রড ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। গত ১৭মে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌর সদরের উথুলি খামারপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত যমজ দুই বোন হলেন মিম (২০) ও লাম (২০)। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আহত দুই মেয়ের বাবা রেজাউল করিম রিজু।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, ঘটনার সময় বাড়ির পাশে কদম গাছের ডাল কাটছিলেন ছাত্রলীগ নেতা পায়েল। এ সময় প্রতিবেশী রেজাউল করিমের মেয়ে লাম তাকে অনুরোধ করেন গাছ কাটার সময় তাদের কলা গাছ যেন নষ্ট না হয়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা পায়েল রড ও হাতুড়ি দিয়ে লামকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় তার যমজ বোন মিম এগিয়ে এলে তাকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে পায়েল ও তার বাবা-মা মিলে লাঠি দিয়ে যমজ দুই বোনকে বেধড়ক মারধর করে। এ সময় তাদের চিৎকার শুনে পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী এসে তাদের উদ্ধার করে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা সুরমাকে বলেন, এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গাঁজা সেবনে নিষেধ করায় শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও ছাত্রলীগ
গাঁজা সেবনে নিষেধ করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় গাঁজা সেবনকারী ছাত্রলীগ কর্মীও আহত হন। গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আহত দুই শিক্ষার্থী হলেন, মেহেদী হাসান পুলক ও আবু অম্বর ফয়েজি অপু। পুলক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও অপু চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে আহত ছাত্রলীগ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ শেখ বন্ধন।
এ ঘটনায় জড়িত অন্য ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন তাশরিফ আহমেদ, রাহাত হাসান খান সময়, আল ফারাবি, সিফাত সালাম, শামসুল আরিফিন খান সানি, আজিজুল হক আকাশ, তাসিন তানভীর, মৃদুল প্রমুখ। এ সময় তাদের সঙ্গে অন্তত ৪০ জন নেতাকর্মী মারধরে অংশ নেন। জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিকেল চারটার দিকে চারুকলা অনুষদের মুক্তমঞ্চের পেছনে গাজা সেবন করছিলেন বন্ধন ও তার দুই বন্ধু। এ সময় সেখানে গাজা সেবন করতে নিষেধ করেন চারুকলার কয়েকজন শিক্ষার্থী। তখন তাদের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে চারুকলার শিক্ষার্থীরা আহত অপু এবং পুলককে জানান। তারা সেখানে আসলে দুপক্ষের মাঝে হাতাহাতি হয়। এ সময় বন্ধনের মাথা ফেটে যায়। এ ঘটনা বন্ধন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জানালে ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে অপুর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে এবং অপুকে রড ও লাঠিশোঠা দিয়ে মারধর শুরু করে। পুলক পাশের একটি দোকানে আশ্রয় নিয়ে সেখানে গিয়ে তাকে মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা দোকানদার রফিককে ধাক্কা দিয়ে দোকানের ক্যাশবক্স থেকে নগদ আনুমানিক ছয় হাজার টাকা ছিনতাই করে বলে অভিযোগ করেন ওই দোকানদার। পরে আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। দোকান ভাঙচুর ও ছিনতাইয়ের বিষয়ে ভুক্তভোগী দোকানদার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মারমারির সময় তারা আমার দোকানে ভাঙচুর করে ক্যাশবক্সে থাকা প্রায় ৬ হাজার টাকা লুট করেছে। এ সময় তারা আমার স্ত্রীকেও মারধর করে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক সুরমাকে বলেন, ‘গাঁজা খাওয়াকে কেন্দ্র করে একটু ঝামেলাটা হয়েছে। যেহেতু এ ঘটনা চারুকলা অনুষদের বাউন্ডারির ভেতর ঘটেছে। শিক্ষার্থীরা ডিন মহোদয় বরাবর একটা আবেদন করবে। তারপর ডিন তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেবে। তারপর আমরা প্রশাসন দেখব।’
ছাত্রলীগের ওপরে কোনো সন্ত্রাস নাই, কোনো শক্তি নাই: ছাত্রলীগ সভাপতি
দ্বিতীয় ধাপে জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে শরীয়তপুর টিঅ্যান্ডটি মোড় এলাকায় আয়োজিত এক পথসভায় জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল ব্যাপারী প্রতিপক্ষ প্রার্থীর দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের ওপরে কোনো সন্ত্রাস নাই, কোনো শক্তি নাই।’ মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাজি মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজীর নির্বাচনী সভায় তিনি ওই বক্তব্য দেন।
ছাত্রলীগ নেতা রুবেল ব্যাপারী ওই বক্তব্যের একটি ভিডিও নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছিলেন। পরে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার মুখে আজ তিনি ভিডিওটি মুছে ফেলেন। ছড়িয়ে পড়া ৪ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ভিডিওতে রুবেল ব্যাপারীকে বলতে শোনা যায়, ‘আজকে ইদ্রিস ফরাজীর বিরুদ্ধে যিনি (আমিনুল ইসলাম রতন) প্রার্থী হয়েছেন, তিনি নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। নৌকা প্রতীকের পক্ষে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের হত্যা করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মার্ডার (হত্যা) মামলা হয়েছে। আপনারা সবাই জানেন, আজকে তিনি প্রার্থী হয়ে এই ইদ্রিস ফরাজির বিরুদ্ধে নানান জায়গায়, নানান বক্তৃতায় হুমকি দিচ্ছেন। আসলে সাধারণ মানুষ ইদ্রিস ফরাজীর পক্ষে রয়েছেন। আমরাও ইদ্রিস ফরাজীর পক্ষে রয়েছি। আপনার এই হুমকি কোনো কাজে আসবে না।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইফুদ্দিন গিয়াস সুরমাকে বলেন, কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী সভায় কেউ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন দাবি করেছেন বা কোনো হুমকিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন এমন অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।