সাহিত্য সাময়িকী ডেস্ক: রাষ্ট্র সবসময়ই নজর রাখে জনগণের উপর। রাষ্ট্রের ক্ষমতা ব্যবহৃত হচ্ছে দমন ও নিপীড়নের কাজে। ভিন্নমত প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। সেই রাষ্ট্রে ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা হলো অপরাধ। কেউ প্রশ্ন করলে পেতে হয় নির্যাতন, হতে হয় গুম, খুন। দমন করা হয় অন্য রাজনৈতিক দলকে। এটা কোন উপন্যাসের ঘটনা নয়; এটা ছিলো একটি বাস্তব গল্প। বাংলাদেশের এই বাস্তবতার সাহিত্যিক উপস্থাপনা হাতে গোনা। এমনকি আগস্ট বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের সময়েও দেশের কবি-সাহিত্যিকরা ছিলেন অনেকটাই নীরব, নিষ্প্রভ। কবি-সাহিত্যিকদের সৃষ্টিশীল কাজে গণ-অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের উপস্থাপনা ছিলো একেবারেই হাতে গোনা। তারই মধ্যে তৃতীয় বাংলাখ্যত বিলেতের প্রধান কবি আহমেদ ময়েজের কাছে জমে আছে আমাদের ঋণ। কবি আহমেদ ময়েজ কবিতা ও ছড়ায় নানা কোণ থেকে আলো ফেলেছেন চব্বিশের বিপ্লব ও গণ-অভ্যুত্থানের ওপর। তিনি ন্যায়ের পক্ষে বলিষ্ট কণ্ঠে সময়ের দাবি ও আর্জি মিটিয়েছেন। সূর্যের মত তাঁর আলোর সবটুকু ছররা তিনি ছড়ায় ও কবিতায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। কবি আহমেদ ময়েজের কিছু ছড়া ও কবিতা পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো।
সময়ের ছড়া
ক্ষমতার ত্রাস
লাশ পড়ছে লাশ
দড়িবাজরা কয়
এটা নয় সন্ত্রাস।
লাশ পড়ছে লাশ
জনতার হাসফাস
সাঈদ চিতিয়ে বুক
পুলিশের টাস্ টাস্।
লাশ পড়ছে লাশ
লাল হয়েছে ঘাস
আগামীর দুর্বার
অগ্নিগিরির চাষ।
(১৮ জুলাই, ২০২৪)
অগ্নিছড়া
ঢাকার আকাশ অগ্নিগর্ভ
ঢাকার আকাশ লাল
কে এনেছে এমন কুমির
কে কেটেছে খাল?
কুমির মাতার বাচ্চাগুলো
কাল হয়েছে গুম
বানর নাচে লেজ উঁচিয়ে
ধুমধুমা ধুম ধুম।
বানর নাচে বানর নাচে
আগুন লাগাও এসে
আগুন এখন ছড়ায় দ্বিগুন
সারা বাংলাদেশে।
(২২ জুলাই, ২০২৪)
ছড়া
মারছে মানুষ ঝাঁকে ঝাঁকে পুড়ছে বাড়ি ঘর
তবু কি আর নরম হবে অত্যাচারীর স্বর?
অত্যাচারী সেই শকুনী ষোল বছর ধরে
প্রতিদিনই কাঁপছে যেন প্রতিশোধের জ্বরে।
(২৪ জুলাই, ২০২৪)
সময়ের ছড়া
পান থেকে একটু যদি
খসে পড়ে চুন
এক পলকে শিশুদেরও
করছো তুমি খুন।
তোর চেতনায় মরছে মানুষ
ষোল বছর ধরে
দেশটা আবার জাগলো বুঝি
স্বাধীনতার জ্বরে।
তোমার এমন তাণ্ডবে আজ
অবাক বিশ্ববাসী
আমার সোনার বাংলা আমি
তোমায় ভালোবাসি।
(৩ আগষ্ট, ২০২৪)
ছড়া
সকল কিছু বন্ধ করে
ভাবছো তুমি রাজা
এ রাষ্ট্রেই হবে তোমার
সকল খুনের সাজা।
গুম করে ঠিক পার করেছো
অনেক বছর ধরে
আর কটা দিন সবুর করো
যাবে যমের ঘরে।
(৩ আগষ্ট ২০২৪)
বাকশাল থেকে আয়নাঘর
সেই যে কবে এসেছিলো বাকশাল
লুটেপুটে খেয়েছিলো টাকশাল।
সেই যে কবে এসেছিলো লালবাহিনী তাণ্ডব
ঘরে ঘরে মরেছিলো কুরুক্ষেত্রের পাণ্ডব।
মানুষ যখন সেসব কথা ভুলছিলো
শেখ হাসিনা সেসব দিনে দোলছিলো।
নতুন করে বানায় হাসু আয়নাঘর
সহযোগী হয়ে ওঠে মোদী-বর।
বছর বছর এমনি শাসন চলছিলো
আস্তে আস্তে মানুষ কথা বলছিলো।
এমনি করে একদিন ঠিক উঠলো ঝড়
ধস নামে শেখ হাসিনার আয়নাঘর।
(৪ আগষ্ট, ২০২৪)
ওরা লিখে দিলো নতুন কবিতা
কবিতার হাড়মাংস খুলে গেছে
পতাকা-আবৃত দেশ
মরা মানুষের গন্ধ নিয়ে বিজয় কেতন ওড়ে
অন্ধকারে ডুব দেয় অস্ত্রধারী ঘাতকের কাঁটা
সুযোগের অপেক্ষায়
ওৎ পেতে মৃদু শ্বাস এখনো টানছে নিরন্তর …
স্পর্ধার পতাকা তোলে
যতোই অভয় দেয় ততোই গোপনে ধ্বংস করতে চায় অর্জনের প্রতিটি পালক।
অন্য এক প্রহসন শুনো—
মেট্রোরেলের ব্যথায় কাঁদছে দু’চোখ
কাঁদেনি সে গুলিবিদ্ধ ছেলের পাজর দেখে
ষোল বছর এমনি ধাতস্থ করেছো মানুষের পরিপাক যন্ত্র
আপাদমস্তক তারা অভ্যস্ত হয়ে ওঠেছে।
উপসংহারে বলে রাখি—
পালাচ্ছে, পালাচ্ছে দেখো ওরা কোনো অজ্ঞাত ঘাতক নয়
আরো অধিক হত্যার নীলনকশা ছিলো ওদের
পায়ে পায়ে আওয়াজ যতো ঘন হয়ে আসে
ম্লান পতাকা ততোই স্পষ্ট হয় সূর্যের আলোয়
মৃত্তিকার বুক ছিড়ে লিখে ফেলে বিজয়ের প্রথম কবিতা
ইনকিলাব জিন্দাবাদ।
(৭ আগষ্ট, ২০২৪)
ছড়া
তোমারা হলে এই প্রজন্ম
তোমরা যুগের হাওয়া
দেশ পালানো লুটেরাদের
পিছু করো ধাওয়া।
(০৭ আগস্ট, ২০২৪)
ছড়ার বয়ান
আমার হাতে কাগজ ছিলো
আমার হাতে কলম
তোমার ছিলো ফ্যাসিবাদের
আজব-রকম মলম …
সেই যে মলম এখন গেছে শুকিয়ে
লোকালয়ে হাঁটছো যে মুখ লুকিয়ে।
আমার হাতে মশাল ছিলো
আমার হাতে দীপ্ত গান
তোমার হাতে বুলেট ছিলো
মানুষ মারার মিশিনগান।
সেই অস্ত্র রাখছো কোথায় ঝুলিয়ে
এখন তুমি হাঁটছো না বুক ফুলিয়ে।
ছি ছি তোমায় তোমার পতন
দেখছে বিশ্ববাসী
কী করে সেই অবিচারে
দিতে লোকের ফাঁসি!
অর্থপাচার করে পকেট ভরেছো
ছলচাতুরী করে তুমি মরেছো।
(৯ আগষ্ট, ২০২৪)
সুশাসন
হয়না ছড়া হয় না ছড়া তালভারি
ঝুলার ভেতর ছড়াকারের গালভারি।
উদাস দুপুর চিল ডাকে না
লুটতরাজে নাকাল দেশ
একই সমান্তরাল দেখো
দাপট দেখায় বাঘ ও মেষ।
স্বাধীনতার পরে যেমন
রৌদ্ররোষে জনতা
প্রতিশোধের অগ্নিগর্ভে
দেখায় ভীষণ ক্ষমতা …
দুর্বৃত্তরা সফল হলে
ক্ষতি হবে অর্জনের
আমজনতা ডাক দেবে ফের
স্বাধীনতা বর্জনের।
হয় না ছড়া হয় না ছড়া মনভারি
সুশাসনের আর্জি লেখো পাততাড়ি।
(৯ আগষ্ট, ২০২৪)
ছড়ার কষাঘাত
সামনে এখন অন্তর্বর্তী
সরকারের হালচাল
কেউ বা ভীষণ খুশী এবং
কেউ বা ফোলায় গাল,
কিন্তু চতুর্দিকে তাদের সচল অন্তর্জাল।
কেউ বা বলে দেখি এবার
ক্যামনে চালাও দেশ
আমরা ঠিকই পালিয়ে আছি—
কর্মীদের নির্দেশ,
দৌড়ের উপর রাখবি এদের ছড়িয়ে বিদ্বেষ।
তাই তো দেখি দিকে দিকে
জ্বলছে আগুন বুঝি
কার বাড়িতে আগুন দিলো
হচ্ছে খোঁজাখুঁজি,
বুলেট এসে কারোর বুকে মারলো সোজাসুজি।
চতুর্দিকে ডাকাত এসে
বাড়ায় যে উৎপাত
কেউ বা আবার ডাকাত ধরে
করছে কুপোকাৎ,
দেশটা তবু এগিয়ে যাবে হবে না পশ্চাৎ।
(১০ আগষ্ট, ২০২৪)