- ব্যাংক এমডিদের ডিনারে খরচ ৫৫ হাজার ডলার!
ঢাকা, ২৪ মে: বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যখন তলানিতে তখন দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৩০টি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)সহ ৪৫ জন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানও তাদের সঙ্গে গেছেন।
যেখানে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রত্যেক এমডিকে খরচ করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১৬ লাখ টাকা।
ডলার সংকটের মধ্যে একসঙ্গে এত এমডির বিদেশ সফর নিয়ে ব্যাংকিং সেক্টরে উঠেছে নানা প্রশ্ন। এই প্রথমবারের মতো ব্যাংকগুলোর পক্ষে বিদেশে এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এমডিদের একযোগে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়া নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
ডলার ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া নিয়ে একটি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টি এর আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। ওই কর্মসূচি শেষে কয়েকজন এমডি অফশোর ব্যাংকিং’র আওতায় প্রবাসীরা যাতে দেশের ব্যাংকে ডলার জমা করেন, তা নিয়ে প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম এমডিদের এই সফরের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, যেসব কাজে ওনারা গেছেন এর কোনোটার জন্যই এমডিদের দল বেঁধে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই। সবসময় এমন ভালো কথা শুনি। সব বেড়ানোর আয়োজন।
ব্যাংক এমডিদের ডিনারে খরচ ৫৫ হাজার ডলার!
ব্যাংক এমডিদের বিনোদনের জন্য আয়োজিত একটি ডিনার অনুষ্ঠানেই খরচ ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ডলার। শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত ডলারের দর ১১৭ টাকা হলেও এ ডলারের বিপরীতে টাকা মূল্য দেখানো হয়েছে ১২৩ টাকা। এককথায় ডলার সংকটের মধ্যেই অতিরিক্ত ডলার খরচ করে মার্কিন মুদ্রাটির সরবরাহ বাড়াতে গেছেন ব্যাংক এমডিরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এই এমডিদের শুধু একটি অনুষ্ঠানের খরচ ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ডলার। এসব ডলারের জোগান দেওয়ার কথা রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি খাতের চারটি ব্যাংকের। যেখানে ডলারের দাম দেখানো হয়েছে ১২৩ টাকা করে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ডলারের দর ১১৭ টাকা। সে হিসেবে এক অনুষ্ঠানেই বাংলাদেশি টাকায় ৬৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা খরচ করবে এই ব্যাংকগুলো।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক এমডিদের খরচের সর্বোচ্চ ১৬ লাখ টাকা করে খরচ করতে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে হিসেবে ৩০ জন এমডি খরচ করতে পারবেন ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা ৪ লাখ ১০ হাজার ২৫৬ ডলার। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের এ সফরে সর্বমোট দেশের খরচ হওয়ার কথা সাড়ে ৬ লাখ ডলারের বেশি।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২৪ মে শুক্রবার রাতে নিউইয়র্কে একটি হোটেলে প্রবাসীদের জন্য অফশোর ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট-সংক্রান্ত প্রচার অনুষ্ঠান শেষে ব্যাংক এমডিদের জন্য ডিনার ও বিনোদনের আয়োজন করা হয়েছে।
তথ্য বলছে, এই অনুষ্ঠানের রাতের খাবারের খরচ ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ৫০০ ডলার। হল ভাড়া বাবদ ৫ হাজার ডলার। লাইটিং ও সাউন্ড সিস্টেমের জন্য ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৬০০ ডলার। গায়ক এবং নৃত্যশিল্পীর জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭০০ ডলার ও বাদ্যযন্ত্রের খরচ ১ হাজার ৬০০ ডলার। এ ছাড়া এজেন্সি সার্ভিস ফি ৬ হাজার, পার্কিং ৩ হাজার, পোস্টার-ব্যানার খরচ ১ হাজার ৫০০, নিরাপত্তায় ৫০০ ও অন্যান্য খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ডলার। সবমিলিয়ে এক ডিনার ও বিনোদনেই চারটি ব্যাংক খরচ করবে ৫৫ হাজার ডলার। তথ্য বলছে, খরচ বহন করার ব্যাংকগুলোর তালিকায় রয়েছে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক, ডাচ-বাংলা, সিটি ও সরকারি খাতের অগ্রণী ব্যাংক। এসব ব্যাংকের প্রত্যেকেই খরচ করবে ১৩ হাজার ৭৫০ ডলার বা ১৬ লাখ ৯১ হাজার ২৫০ টাকা।