- পেমেন্ট জটিলতায় কাজ হারাচ্ছেন অনেক ফ্রিল্যান্সার।
আব্দুল ওয়াহিদ তালিম, লণ্ডন- বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন দেশের অর্থনীতিতে। এই ফ্রিল্যান্সাররা বিগত সরকারের কাছে বহুবছর ধরে আকুতি জানিয়ে আসছিলেন পেপাল চালু করার ব্যাপারে। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বারবার আশ্বস্ত করা হলেও চালু করা হয়নি পেপাল। এই সেবা চালু না হওয়ার কারণও স্পষ্ট করা হয়নি দায়িত্বশীল কোনো জায়গা থেকে। বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে চলমান এই সেবা ব্যবহার করেন প্রায় ৪২৬ মিলিয়ন ব্যবহারকারী, রয়েছে ২৫ কারেন্সি ব্যবহারের সুবিধাও।
২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের এক হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে বছরে বাংলাদেশে আসে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরেও অনেক টাকা ফ্রিল্যান্সাররা আয় করেন যেগুলোর বিষয়ে সরকার অবগত নয়। মূলত পেপ্যাল না থাকার কারণে ফ্রিল্যান্সাররা বাধ্য হয়ে অন্য চ্যানেলে টাকা আনেন। যার ফলে ফ্রিল্যান্সাররা রেমিটেন্সের কমিশন লাভ থেকে বঞ্চিত হোন, পাশাপাশি সরকারও সঠিক পরিমাণ কর পায় না। বর্তমানে পেপালের বিকল্প হিসেবে পেওনিয়ারসহ অনেক মাধ্যম ব্যবহার করেন ফ্রিল্যান্সাররা। তবে বহির্বিশ্বে পেপালের ব্যবহারকারী সংখ্যায় বেশি এবং ব্যবহার সহজলভ্যতার কারণে ক্লায়েন্টরা পেপালে পেমেন্ট প্রদানকেই অগ্রাধিকার দেন। শুধুমাত্র এই পেমেন্ট জটিলতার কারণেই কাজ হারান অনেক ফ্রিল্যান্সাররা।
বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে পেমেন্ট নেয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে আরেক জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি। যার প্রধান সুবিধা হচ্ছে দ্রুত লেনদেন সম্পন্ন করতে পারা। দেশে বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। সবার কাছে ক্রিপ্টোকারেন্সি নামে পরিচিত হলেও মূলত এটি একটি ডিজিটাল মুদ্রা। এটি সম্পূর্ণরূপে বিকেন্দ্রিকভাবে পরিচালিত ডিজিটাল মুদ্রা যা অর্থ প্রদানের একটি বিকল্প হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। ক্রিপ্টোকারেন্সির সম্পূর্ণ ধারণাটি আসলে দাঁড়িয়ে আছে ক্রিপ্টোগ্রাফি ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির ওপর। মুদ্রার লেনদেন ক্রিপ্টোগ্রাফির দ্বারা সুরক্ষিত হয়। এ মুদ্রার হিসাব রাখা হয় ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির মাধ্যমে ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দ্বারা, যা কিনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হয়ে থাকে। এ মুদ্রার বিশেষত্ব, এ ধরনের মুদ্রা প্রচলন, প্রবহন ও নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর একদম নির্ভরশীল নয় এবং এটাকে হ্যাক করা প্রায় অসম্ভব। বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে সেকেন্ডের মধ্যেই লেনদেন সম্ভব। লেনদেন সম্পাদনের জন্য কোনো তৃতীয় পক্ষ নেই এখানে। ব্যবহারের আইনগত অনুমতি না থাকলেও তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১ সালে ব্যবহারকারীদের ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় লেনদেনে বিরত থাকতে বলেছিল। তবে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাংলাদেশে বাড়ছে দিন দিন। এর বৈধতা নিয়ে কি ভাবছে এই নতুন সরকার তা নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন।
বেশকিছুদিন থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন গ্রুপগুলোতে ক্রিপ্টোকারেন্সির বৈধকরণের দাবি উঠছে। সীমিত আকারে হলেও এটি চালু করলে দেশের অর্থনীতির জন্যই লাভজনক হবে বলে মনে করেন অনেকে। দেশে প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে অনেকে মনে করছেন বাংলাদেশে ক্রিপ্টকারেন্সির বৈধতা দেওয়া হলে এটা হবে অপরাধীদের জন্য অর্থ লেনদেনের সহজ মাধ্যম। আবার ক্রিপ্টো কেনা-বেচার এক্সচেঞ্জগুলোকে যদি বিভিন্ন আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় তাহলে এর বৈধতা নিয়ে দ্বিধাবোধ করা উচিৎ হবে না বলে মনে করছেন অনেকে।
বিগত সরকারের আমলে আইসিটি মন্ত্রণালয় সময়মতো উপযুক্ত পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন দেশের ফ্রিল্যান্সাররা। পাশাপাশি সরকারও হারিয়েছে করের অনেক অর্থ। সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও ফ্রিল্যান্সারদের আসল প্রয়োজনগুলো বুঝেনি বিগত সরকার। তাই নতুন সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা দেশের ফ্রিল্যান্সারদের। পেপাল, ক্রিপ্টোকারেন্সির বৈধতার পাশাপাশি এই সরকার আইসিটি খাতকে ঢালাও ভাবে সাজিয়ে দেশ ও দশের কল্যাণে বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা সবার।