- অ্যাসাইলাম প্রার্থীদের পিঠে মুনা তাসনিমের ছুরি।
লণ্ডন, ২১ মে: যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ১১ হাজার অ্যাসাইলাম প্রার্থীকে দেশে ফেরত নিতে বাংলাদেশ একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে যুক্তরাজ্যর অ্যান্টি ইমিগ্র্যান্ট পলিসি বাস্তবায়ন সহজ হবে। বাংলাদেশের মত অনুন্নত দেশের নাগরিকেরা অভিবাসন বঞ্চিত হবে, তাদের জীবনের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে। দেশগুলো রেমিটেন্স থেকে বঞ্চিত হবে। এই ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে যুক্তরাজ্য একপাক্ষিক সুবিধা পাবে।
বৃহস্পতিবার দেশ দুটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে এটি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন খারিজ হওয়া এবং ভিসার মেয়াদ পার হয়ে যাওয়া অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সহজ হবে বলে জানিয়েছে খোদ যুক্তরাজ্য সরকার।
ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ানের মধ্যে সাম্প্রতিক বৈঠকের ভিত্তিতে ওয়ার্কিং গ্রুপটি তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বৈঠকে জোর দিয়ে বলেছেন যে, অবৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি জিরো টলারেন্স পদ্ধতি আছে। যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ান নতুন রিটার্ন চুক্তিতে সম্মত ও সমর্থনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর জানায়, এর ফলে অবৈধ বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে একটি বাধা দূর হবে। এতোদিন কাউকে ফেরত পাঠাতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে তার একটি সাক্ষাৎকার নিতে হতো নিজ দেশের দূতাবাসকে। এখন থেকে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকলে এই “ম্যান্ডাটরি ইন্টারভিউ” এর প্রয়োজন হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে। এর আগে আলবেনিয়া সরকারের সাথে প্রত্যাবাসন চুক্তি করে ব্রিটেন। সেই চুক্তির পর দেশটি থেকে ছোট ছোট নৌকায় চড়ে যুক্তরাজ্যে অনুপ্রবেশ ৯০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর।
লণ্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশন থেকে জানানো হয়েছে, আগে ইইউ’র সঙ্গে থাকা চুক্তির আওতায় ব্রিটেন থেকে অবৈধ নাগরিকদের ফেরত পাঠানো হলেও ব্রেক্সিটের পর দেশটির সাথে কোনো চুক্তি ছিল না। তাই এই সমঝোতা করা হয়েছে। আগে থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যাবাসনের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিওর (আদর্শ কর্ম প্রক্রিয়া) বা এসওপি ছিল। এর আওতায়ই ইউরোপের কোনো দেশে অনুমোদনহীন কোনো বাংলাদেশি থাকলে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হতো। ২০২০ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে ব্রিটেন আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে, দেশটির বেলায় আর এসওপি প্রযোজ্য ছিল না। যে কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন করে আলাপ আলোচনা শুরু করতে হয় বলে জানান লণ্ডনে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম। তিনি বলেন, “দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অনেক বিষয় আমরা কমিউনিকেট করতে পারছিলাম না, আলাপ আলোচনাও হচ্ছিল না। সেজন্য জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো লণ্ডনে, যেখানে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকটি সই হয়।”
নাম না প্রকাশ করার শর্তে সেগুণবাগিচার একজন কুটনৈতিক সুরমাকে জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের বর্তমান হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম পররাষ্ট্র সচিব হওয়ার জন্য নানাভাবে সরকারকে তুষ্ট করার চেষ্টা করছেন। আগ বাড়িয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষর সেই চেষ্টার অংশ হতে পারে। তিনি আরও বলেছেন, হাইকমিশনের পক্ষ থেকে তিনটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা বলা হলেও এটি আসলে সঠিক নয়। তিনি আগ বাড়িয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন এবং যুক্তরাজ্য সরকারকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। এটি তাঁর কুটনৈতিক কোন সাফল্য নয় এটি বরং অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী একটি কাজ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। পৃথিবীর খুব কম দেশের কুটনৈতিকরাই এই ধরনের হাস্যকর কাজ করতে এগিয়ে আসে। এটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। যুক্তরাজ্য সরকারের জন্য এটি একটি কুটনৈতিক সাফল্য। মানবাধিকার বঞ্চিত মানুষ যখন একের পর এক আবেদন করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে, নিজ দেশের সরকার তখন তার রাজনৈতিক স্বার্থে তাদের পিঠে ছুরি বসাচ্ছে। এটি খুবই দু:খজনক ঘটনা।
জানা গেছে, গত বছরের মার্চ মাস থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ১১ হাজার বাংলাদেশি ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করে তারা ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাসের চেষ্টা করছেন। সর্বাধিক আবেদন করেছেন পাকিস্তান থেকে আসা ব্যক্তিরা। তাদের সংখ্যা ১৭ হাজার ৪০০’র মতো। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত, যাদের আবেদনের সংখ্যা সাত হাজার চারশো। কিন্তু এই দুটি দেশ এখনো এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি।
উল্লেখ্য, অভিবাসন কমানোর উদ্দেশ্যে ২০২৩ সালের শেষদিকে যুক্তরাজ্যর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় “পাঁচ দফা পরিকল্পনা” ঘোষণা করে। এতে সোশ্যাল কেয়ার ওয়ার্কারদের (সামাজিক সেবা প্রদানকারী) ভিসার ভিত্তিতে স্বামী-স্ত্রী, সন্তানদের নেয়ার সুযোগ বাতিলের কথা জানানো হয়। একইভাবে, স্পাউস বা পার্টনার ভিসায় স্বামী, স্ত্রী বা সঙ্গীকে নিতে হলে ওই ব্যক্তির আয়ের যে সীমা নির্ধারিত ছিল তাও বাড়ানো হয়।