কেএমএ হাসনাত: আগামী অর্থবছরের বাজেটের মোট ব্যয় বরাদ্দের ৬৪ শতাংশ বরাদ্দ ধরা হচ্ছে অনুন্নয়ন ব্যয় খাতে। প্রণোদনা-ভর্তুকি, ঋণের সুদ পরিশোধ এবং সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা খাতেই থাকছে প্রায় ৪৯ শতাংশ। এর মধ্যে প্রণোদনা ভর্তুকিতে এক লাখ ৭৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা, সুদ পরিশোধে ৮০ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা এবং সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা খাতে খরচ হবে ৭৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সব মিলিয়ে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে যে বাজেট সরকার চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে তাতে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে চার লাখ ৩১ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ৫৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বেশি।
জানা গেছে, নতুন অর্থবছরের জন্য সম্প্রতি ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
অর্থ বিভাগের নতুন বাজেট প্রস্তাবে পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় খাতের অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি খাতে আগামী অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর মধ্যে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ- এ তিনটি খাতে একত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ২৬ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২৭ হাজার ৯১০ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে এ তিন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা।
খসড়া বাজেট উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতি বছরই ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। কোনো কোনো বছর মূল বাজেটে বরাদ্দের অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে ব্যয় হয়েছে ৩১ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যয় বেড়ে হয়েছিল ৪৮ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে ৪৬ হাজার ১৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সংশোধিত বাজেটে প্রায় ১২ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা ভর্তুকি বাড়ছে বলে জানা গেছে। একইভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রণোদনা খাতে ব্যয় হয়েছে ৫১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা।
বাজেটে এককভাবে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় ঋণের সুদ (দেশি-বিদেশি) পরিশোধে, বিশেষত অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে। বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যয়ে তেমন হেরফের লক্ষ্য করা যায়নি। নতুন বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা (এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৬২ হাজার কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের সুদ ৬,৫৮৯ কোটি টাকা)।
অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের সুদ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা (এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ৬৬ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ৪ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা)। আলোচ্য অর্থবছরের মূল বাজেটে সুদ ব্যয় খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা (এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা)। অর্থাৎ বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও সুদ ব্যয় বেড়েছে ৬ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা।
অন্যান্যের মধ্যে নতুন বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ছয় হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ৬৯ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয়েছিল ৬৫ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা।
আগামী বাজেটে পণ্য ও সেবা খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে সরকারের ব্যয় হয়েছিল ২৫ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা।
এদিকে বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। এটি প্রাক্কলিত বাজেটের ৩৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয়ের আকার উন্নয়ন ব্যয়ের তুলনায় প্রায় পৌনে দুই গুণ বেশি।