মিনহাজুল আলম মামুন, ৮ অক্টোবর: “অখণ্ড বাংলাদেশ আন্দোলন” এর প্রথম শহিদ, জুলাই বিপ্লবীদের প্রথম ইমাম এবং ইন্ডিয়ান আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসন বিরোধী লড়াইয়ের অগ্রসৈনিক আবরার ফাহাদের ৬ষ্ঠ শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ৭ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার “অখণ্ড বাংলাদেশ আন্দোলন” এর উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বৃক্ষরোপন এবং লন্ডনের ওয়েস্টফিল্ড ব্লাড ডোনার সেন্টারে রক্তদান ও হেকনি টাউন হলে আলোচনা সভা ও প্রামাণ্যচিত্র ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’ প্রদর্শিত হয়।
আলোচনা সভায় “অখণ্ড বাংলাদেশ আন্দোলন” এর আহবায়ক ‘হাসনাত আরিয়ান খান’ শহিদ আবরার ফাহাদের দেশপ্রেম, ন্যায্য দাবি, ন্যায়বোধ ও তাঁর আত্মত্যাগকে জাতির চেতনা জাগ্রত করার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। এসময় তিনি আবরার ফাহাদের মা-বাবা, পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদনা প্রকাশ করেন। আবরার ফাহাদসহ জুলাই বিপ্লবে যারা শহিদ হয়েছেন, জান্নাতে তাঁদের উচ্চ মাকাম ও তাঁদের মাগফিরাত কামনা করেন। একই সঙ্গে শহিদ আবরার ও জুলাই শহিদের রক্তের দায় শোধ করার জন্য বাংলাদেশপন্থী ইতিবাচক রাজনীতি ও আগ্রাসনমুক্ত সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্ববান করেন।
হাসনাত আরিয়ান খান বলেন, ‘২০১৯ সালে আবরার শহিদ হওয়ার পর প্রতি বছর তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে আমাদের সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী গ্রেফতার, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। জুলাই বিপ্লবের পর এই প্রথম সারা দেশের মানুষ নির্ভয়ে, নির্বিগ্নে একসঙ্গে আবরার ফাহাদের শাহাদাত বার্ষিকী পালন করতে পারছে, এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আবরার ফাহাদের শাহাদাত বার্ষিকীতে সরকার এই দিনটাকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। “অখণ্ড বাংলাদেশ আন্দোলন” এর পক্ষ থেকে আমরা সরকারের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাই।’
তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থে কথা বলার কারণে, ইন্ডিয়ান আগ্রাসন বিরোধী অবস্থানের কারণে আর কোনো শিক্ষার্থীকে যেন আবরার ফাহাদের মত জীবন দিতে না হয়। এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার সামান্যতম পুনরাবৃত্তিও যেন আর কখনো না ঘটে, এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। দেশপ্রেমের চেতনা জাগ্রত রাখার অঙ্গীকার করতে হবে। দেশপ্রেম, সত্য প্রকাশ ও ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠার পথে অবিচল থাকার শপথ নিতে হবে। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দেশের রাজনীতির বিদ্যমান ধারা বদলে বাংলাদেশপন্থি নতুন বন্দোবস্তের রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
আলোচনা সভা শেষে “অখণ্ড বাংলাদেশ আন্দোলন” এর পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে-
১. দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। প্রত্যেকটি ক্যাম্পাসের ছাত্র সংসদ সক্রিয় করতে হবে।
২. ৭ অক্টোবরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে “শহিদ আবরার ফাহাদ দিবস” ঘোষণা করতে হবে। সেইসাথে ফেনী নদীর নাম বদলে “শহিদ আবরার ফাহাদ নদী” রাখতে হবে।
৩. বাংলাদেশের সমুদ্র ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য একটি বিস্তারিত প্রতিরক্ষা নীতি এবং একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করতে হবে।
৪. রোহিঙ্গাদের বাঙালি স্বীকৃতি দিয়ে আরাকানকে বাংলাদেশের সাথে যুক্ত করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সরকারকে অতি দ্রুত সেসব পদক্ষেপ নিতে হবে।
৫. চিকেন নেকের আশেপাশে ফুল ফোর্স আর্মি ডেপ্লয় করতে হবে। লালমনিরহাটের বিমানঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। সেখানকার এয়ারবেসকে ঢেলে সাজাতে হবে।
৬. ইন্ডিয়ার সঙ্গে সামরিক, বেসামরিক সকল চুক্তি জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে। জনস্বার্থবিরোধী ও অন্যায্য চুক্তি বাতিল করতে হবে। ‘অখণ্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’ কে রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে।
প্রামাণ্যচিত্র ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’ প্রদর্শন শেষে শহিদ আবরার ফাহাদের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত শেষে বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিরনি বিতরণ করা হয়।