আগরতলা, ৬ সেপ্টেম্বর : আমরা বাঙালী দলের পক্ষ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর তেলিয়ামুড়াতে এক বিক্ষোভ মিছিল ও বাজার সভার আয়োজন করা হয় তেলিয়ামুড়ার ব্লক কমিটির উদ্যোগে। সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সচিব গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল মহাশয়। তাছাড়া উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম ও প্রচার সচিব দুলাল ঘোষ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অশোক কুমার দাস সহ আমরা বাঙালী দলের অন্যান্য প্রতিনিধিগণ ।
গত রবিবার ৩১ শে আগষ্ট তেলিয়ামুড়াতে সি পি এমের সমাবেশ থেকে আমরা বাঙালী দল সম্পর্কে মাণিক সরকারের কটূক্তিকর মন্তব্য করার পরিপ্রেক্ষিতে দলের বক্তারা বলেন সি পি এম যে এই রাজ্যে সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিয়েছে শুধু আমরাই বলছি না। বর্তমান সরকারের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ও আমাদের বক্তব্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলেছেন সি পি এম হলো সন্ত্রাসবাদের জন্মদাতা।পরনিন্দা ও কারোর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হলো তাদের দলের বড় কাজ। তাঁরা যে কংগ্রেসের সঙ্গে আঁতাত করে দীর্ঘদিন ঘর করেছেন তারাই এক সময়ে কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলত গোলি গোলি মে শোর হে রাজীব গান্ধী চোর হে। আবার ইন্দিরা গান্ধী সম্পর্কে ও নানা কুৎসা রটিয়েছে।যে বঙ্গ মাতার বীর সন্তান নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ভারত মাতাকে দানবীয় শক্তি ইংরেজদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য আজাদ হিন্দ ফৌজ নিয়ে দিল্লী চলো শ্লোগান তূলে যুদ্ধ ঘোষণা করলে কমিউনিস্টরা নেতাজীর বিরুদ্ধাচরণ করে নেতাজীকে তেজোর কুকুর বলে,কুইসলিং বলে গালিগালাজ করে দেশ বাসীকে নেতাজীর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলেন।
শুধু তাই নয় নেতাজীর ব্যঙ্গচিত্র এঁকে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন। শুধু তাই নয় রবীন্দ্রনাথকে কত কটূক্তিকর মন্তব্য করেন, কখনো বলেন বুর্জোয়া কবি। আবার নাস্তিক বাদী ধর্ম বিরোধী মানবতা বিরোধী এই কমিউনিস্টরা বিবেকানন্দকে ভন্ড সাধু ও রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবকে নিয়েও কুটুক্তি করে। ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় কে নিয়ে ও নানা ধরনের ঘৃণ্য সমালোচনা করে। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি কে নিয়ে ও বিদ্রূপ সমালোচনা করে।এই হলো তাদের চরিত্র। আবার এই কমিউনিস্টের নেতারা মুসলিম লীগের পক্ষ অবলম্বন করে সংখ্যালঘু মুসলিমদের কলকাতাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে আন্দোলন করে। তাদের সেদিনের শ্লোগান ছিল লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তানকে লিয়ে কলকাতা। শেষ পর্যন্ত ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হলে শুরু হয় নূতন আন্দোলন এই আজাদি ঝুটা হ্যাঁয়। কমিউনিস্টরা হলো আসল ছলনাময়ী দল।দেশ ভাগের পর যখন নিজেদের পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছিল তখন শুরু করে নকশাল আন্দোলন। এরপর ধরপাকড় শুরু করলে তখন উদ্বাস্তু বাঙালীদের নিয়ে শুরু করে নূতন করে সরকার বিরোধী আন্দোলন। চীন ভারত যুদ্ধে ভারতের বিপক্ষে গিয়ে চীনের দালালি করে মিছিল মিটিং করে।
ত্রিপুরার বুকে দেশভাগের কারণে সমতল ত্রিপুরার বাঙালী প্রজারা পার্বত্য ত্রিপুরার আসতে শুরু করলে তখন এই রাজ্যে কমরেডদের অনুপ্রেরণায় দশরথ দেব এরা শুরু করে বাঙ্গাল খেদা আন্দোলন। তাদের পার্টির নাম ছিল সাংক্রাক যার অর্থ গলা কাটা। তখন একদিকে দেশ ভাগের বলি হয়ে ও ত্রিপুরার রাজ পরিবারের ব্যর্থতায় সমতল ত্রিপুরা পূর্ব পাকিস্তানের দখলে চলে গেলে সেখানকার প্রজারা পার্বত্য ত্রিপুরায় আশ্রয় নিলে কমরেডরা রাত্রিতে ত্রাণ শিবিরে আগুন ধরিয়ে দিত। তাঁরাই যখন ক্ষমতায় এসেছে ১৯৭৮ সালে তখন উপজাতিদের ভোট ব্যাংক সুরক্ষিত রাখার জন্য জমি হস্তান্তর বিল পাস করে। এর ফলে বাঙালীরা ভূমিহীন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। তাই বাঙালীরা এর বিরোধিতা করলে বাঙালীদের থেকে উপজাতির চির বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার জন্য এডিসি চালু করতে চাইলেন। কিন্তু বাঙালীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় এলাকা থাকায় এডিসি গঠন সন্ডব ছিল না।
তাই বাঙালী বিতাড়ন করে এডিসি আইন বলবৎ করার জন্য উপজাতিদের বাঙালীদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে।যার অন্তিম পরিণতি আশি সালের বাঙালী গণহত্যার মাধ্যমে হাজার হাজার বাঙালী যেমন খুন হয় তেমনি উপজাতিরাও মারা পড়ে।এই গণহত্যার পর আমরা বাঙালী দলের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার দাবি করলে সি পি এমের মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তী বলেছিলেন আমরা যতদিন ক্ষমতায় থাকব ততদিন এর তদন্ত হবে না। তাই নৃপেন চক্রবর্তী ও মাণিক সরকারের আমলে যে হাজার হাজার বাঙালী খুন হয়েছে অপহরণ হয়েছে শত শত মা বোনেরা ধর্ষিত হয়েছে এর বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি। অথচ আমরা বাঙালী দল প্রতি বছর ৬ ই জুন অভিশপ্ত কালো দিনটিকে স্বরণ করে আসছে ও মৃতদের আত্মার শান্তির জন্য আগেকার জোট সরকারের কাছে এবং বর্তমান সরকারের কাছে ও এই গণহত্যার তদন্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে। কোন রাজনৈতিক দল গদি রক্ষার জন্য ও জনজাতি ভোটের জন্য এই ব্যাপারে একেবারে নীরব। আমরা লক্ষ্য করলাম গত বৃহস্পতিবার দিন বর্তমান সরকারের রাজ্যসভার সাংসদ আশি সালের গণহত্যা নিয়ে বামেদের ব্যর্থতা তুলে ধরেছেন। আমরা বাঙালী দলের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের কাছে দাবি করছি আশি সালের ও এর তৎপরবর্তী গণহত্যার নায়করা এখনও বেঁচে আছে যদি বিচারবিভাগীয় তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তি দেয় তাহলে মৃতদের আত্মা শান্তি পাবে। এই বামেদের কারণে বনমালী পুরের বিধায়ক ভোলা সাহা খুন হয়। তাছাড়া খুন হয়েছে সদরের এস ডি এম সুখরাম দেব্বর্মা। আমরা বাঙালী দলের কংগ্রেস দলের বহু নেতাকর্মী খুন হয়েছে।আজ পর্যন্ত বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হয়নি।তাই এই সকল হত্যাকাণ্ডের পূর্ণ তদন্ত হওয়া দরকার আমরা বাঙালী দলের দাবি।

