পরিবেশ ডেস্ক: জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে সারাবিশ্বেই বায়ুম-লের তাপ বাড়ছে। বাংলাদেশেও এর অংশ হিসেবে উষ্ণতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় দাবদাহ ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি মৌসুমে ঢাকায় গত ৫৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। একই সঙ্গে দেশের ইতিহাসে নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বৈশাখের চার দিন পেরিয়ে গেলেও ঝড়বৃষ্টির খবর নেই; যা নিকট অতীতে ঘটেনি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে অস্বাভাবিক গতিতে। ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার বেড়ে যাওয়ার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, সবুজ ভূমি এবং জলাশয় কমে যাওয়ায় শীতকালেও অস্বাভাবিক উষ্ণ থাকছে রাজধানী। ঢাকার দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য দ্রুত কমে আসছে।
পানি ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং ব্র্যাক বিশ্ব^বিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত আমাদের সময়কে বলেন, এমনিতে এ সময়ে গরম থাকবে এটা স্বাভাবিক। পাশাপাশি বৃষ্টিও হওয়ার কথা। সেটা হচ্ছে না বিধায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। চার সপ্তাহ আগে দেশে বৃষ্টি হয়েছে, ঝড় হয়েছে। কিন্তু বৈশাখী ঝড় তো এখন হওয়ার কথা। আমরা কয়েক যুগ ধরে তাই দেখে আসছি। কিন্তু এখন হচ্ছে না। এই না হওয়াটাই জলবায়ুর পরিবর্তন। বিশ্ব^ব্যাংকের হিসাবে পৃথিবীর মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্র শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ নিঃসরিত হয় এই বাংলাদেশে। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের দায় না থাকলেও আমরা এর বিরূপ প্রভাবের শিকার হচ্ছি চরমভাবে।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান এবং বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, পরিবেশ ঠান্ডা রাখতে জলাশয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অথচ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনেক নদনদী শুকিয়ে গেছে। আর ঢাকায় তেমন জলাশয় নেই বললেই চলে। ঢাকাসহ সারাদেশে কংক্রিটের স্থাপনা বাড়ছে, পাশাপাশি সবুজায়ন ও জলাশয় কমছে। রাজধানীর তাপমাত্রা বাড়ার আরেকটি বড় কারণ ঢাকার রাস্তায় চলা ১৫ লাখেরও বেশি গাড়ি। এসব গাড়ি গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
চৈত্রের শেষদিন থেকে তাপমাত্রা চড়তে থাকার রেকর্ড ভাঙার যে প্রবণতা শুরু হয়েছিল তা থেমেছে। তবে গরমের অস্বস্তি কমেনি। ঢাকার তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস কমলেও মাথার ওপর সূর্যের খাড়া অবস্থানের কারণে দিনের বড় অংশ আগের কয়েকদিনের মতোই তপ্ত ছিল।
গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে রাজশাহীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন সোমবার ঈশ্বরদীতে যা ছিল দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পারদ এক ডিগ্রি নেমে এলেও গরমের অস্বস্তি কমার সম্ভাবনা নেই আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে। গত সোমবার রাতে সিলেটের বৃষ্টি অনেককেই আশ্বান্বিত করছে। দখিনা হাওয়া বইতে শুরু করার মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তরও দেশের কয়েক জায়গায় বৃষ্টির আভাস দিয়েছে। আজ রাতে বৃষ্টি নামতে পারে ঢাকাসহ চার বিভাগে।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে রাজশাহীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টির আভাস দিয়ে তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে ঢাকাসহ চারটি বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। বিভাগগুলো হচ্ছে- ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, নিকট অতীতে এমন টানা অনাবৃষ্টির ঘটনা ঘটেনি। গত বছরের এপ্রিলের ১০, ১১, ১২, ২০, ২১ এপ্রিল, তার আগের বছরের ৮, ৯ ১৬, ১৭ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। ২০২০ সালের ১১, ১৮, ২৩, ২৪ এপ্রিল বৃষ্টি হয়েছে। ২০১৯ সালে ৫, ৬, ১০, ১৭ এপ্রিল বৃষ্টি হয়েছে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছে।