পশ্চিমবঙ্গ নিউজ ডেস্ক: মাসখানেক পর পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের মৌসুম শুরু হচ্ছে। এর আগে কেউ যেন জাটকা ইলিশ বেআইনিভাবে বিক্রি করতে না পারেন, সে জন্য একজোট হয়েছে রাজ্যের তিনটি জেলার মৎস্যজীবীদের সংগঠন। উপকূলবর্তী উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের ৬২টি সংগঠন বেইআনি ইলিশ ধরা বন্ধে একজোট হয়ে কাজ করবে।
গত বছর এই সময় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও একশ্রেণির মৎস্যজীবী সাগর থেকে অবৈধভাবে জাটকা ইলিশ ধরে বাজারে বিক্রি করেন। এতে রাজ্যের মানুষ ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়। কমে যায় ইলিশের উৎপাদনও। ফলে ভরা মৌসুমে মেলেনি কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। এবারও যেন গত বছরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য আগাম ব্যবস্থা নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যজীবীরা।
সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার মৎস্য বন্দরে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মৎস্যজীবীরা বৈঠকে বসেন। সেখানে যোগ দেন এই তিন জেলার মৎস্যজীবীদের ৬২টি সংগঠনের কর্মকর্তারা। ইলিশ রক্ষায় কমিটি গঠন করে জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন তাঁরা।
এর মধ্যে রয়েছে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় জাটকা ইলিশ যাতে ধরতে না পারে, তার ওপর নজর রাখা। মৌসুম শুরুর আগে কোনো মাছ ধরার ট্রলার যেন সাগরে প্রবেশ করতে না পারে, সেটি খেয়াল রাখা।
মৎস্যজীবীরা আশা করছেন, এর ফলে এ বছর ইলিশ মৌসুমে গতবারের মতো ইলিশ থেকে রাজ্যের মানুষ আর বঞ্চিত হবেন না। পাশাপাশি মৌসুমে ইলিশ ব্যবসায়ীদের ভাগ্যও খুলে যেতে পারে। তবে মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, গত বছর জাটকা ইলিশ ধরা নিয়ে পুলিশকে অভিযোগ জানালেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই এবার অবৈধভাবে কেউ যেন জাটকা ধরতে না পারেন, সে জন্য গতকাল মঙ্গলবার রাজ্য মৎস্য দপ্তরে লিখিত আবেদনও করেছেন তাঁরা।
এদিকে মৎস্যজীবীদের বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, কেউ জাটকা ইলিশ ধরলে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী ও ট্রলারমালিক সুজিত দাস বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ‘গত বছর পুলিশের চোখ এড়িয়ে অনেকে খোকা ইলিশ ধরে তা গোপনে বাজারে বিক্রি করেছিল। এবার আর সেসব হতে দেওয়া হবে না। সেই লক্ষ্যে আমরা আগাম ব্যবস্থা নিয়েছি।’
কলকাতার ইলিশ ব্যবসায়ী ও আমদানিকারী প্রতিষ্ঠানের সভাপতি অতুল দাস বুধবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেছেন, ইলিশ মৌসুম দ্বারপ্রান্তে। আমরা সবাই ইলিশের জন্য অপেক্ষা করে আছি। গত বছর অবৈধভাবে জাটকা ইলিশ ধরায় আমাদের ইলিশ উৎপাদন কমে গিয়েছিল। বাংলাদেশ থেকেও সেভাবে ইলিশ আমদানি করতে পারিনি। এবার যেন রাজ্যের মৎস্যজীবীরা ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে পারেন, সেই লক্ষ্যে জাটকা ইলিশ গোপনে ধরা ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী, এ বছর ইলিশ মৌসুমে আমরা ইলিশ থেকে একেবারে বঞ্চিত হবো না।
নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন মাছ ধরার অভিযোগ ওঠায় ২০০ টলারের লাইসেন্স নবায়ন করেনি রাজ্য সরকার। মূলত সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য দুই ধরনের জাল ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। মাছ ধরার ট্রলারে যেকোনো একধরনের জাল ব্যবহার করার নিয়ম আছে। কোনো ট্রলারকে একই সঙ্গে দুই ধরনের জাল ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। এই নির্দেশ যারা অমান্য করেছে, তাদের অনেকের এবার লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি।