লণ্ডন, যুক্তরাজ্য: ১৫ আগস্ট “জাতীয় শোক দিবস” কে শোক দিবস না বলে “মহা বিপ্লব দিবস” বললেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ড. কর্ণেল শহীদ উদ্দিন খান। গত ১৫ আগস্ট মঙ্গলবার তিনি ফেইসবুক স্ট্যাটাস ও ভিডিও বার্তায় এই কথা বলেন।
ফেইসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘আজ ১৫ আগস্ট, সেই “মহা বিপ্লব দিবস”। সকল দেশবাসীকে মহা বিপ্লব দিবসের সালাম। স্কলার মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত, তাঁর জান্নাতুল-ফেরদৌস প্রাপ্তির জন্য দোয়া করছি। আমীন। নিম্নের ২টি জলজ্যান্ত প্রমাণই বলে দেয় যে, ১৫ আগস্ট কোন শোক দিবস নয়, বরং এটা একটি “মহা বিপ্লব দিবসঃ (১) গুন্ডা মুজিবের মৃত্যুর পর মানুষ কাঁদেনি, বরং খুশিতে মিস্টি বিতরণ করেছে, আওয়ামী লীগের তৎকালী মন্ত্রী এবং স্পীকার আব্দুল মালেক উকিল বলেছিল, “মুজিবের মৃত্যুতে আমরা ফেরাউন মুক্ত হলাম”। আর দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে হত্যার পর দেশে-বিদেশে কোটি কোটি জনতা আজও কাঁদছে। (২) গুন্ডা মুজিবের মৃত্যুর পর জানাজার জন্য কোন মানুষ খোঁজে পাওয়া যায়নি, আর দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে হত্যার পর কোটি কোটি জনতা দেশে-বিদেশে আজও জানাজার নামাজ আদায় করছে। আমীন।’
ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আসসালামু আলাইকুম। আজ সেই ১৫ আগস্ট। মহা বিপ্লব দিবস। আমি আপনাদেরকে মহা বিপ্লব দিবসের সালাম জানাচ্ছি। আওয়ামী গুন্ডারা এই দিনটাকে বলে শোক দিবস। যার কোন যুক্তি নেই। গুন্ডা মুজিব মুক্তিযুদ্ধে ছিল না, মুক্তিযোদ্ধা ছিল না। তাঁর ফ্যামিলি নিরাপদে ছিলো ঢাকায় পাকিস্তানের তত্ববধানে। সে কখনও স্বাধীনতা চায়নি। তার কোন প্রমাণও নেই। আমি কোন গবেষণার কথা বলতে আসিনি। আমি সত্য কথা বলতে এসেছি। নতুন প্রজন্ম জানেনা, গুন্ডা মুজিব যখন পাকিস্তান থেকে এসে দেশের প্রধানমন্ত্রী হলো, তখন দেশের রাস্তায় রাস্তায় অলিতে-গলিতে লাশ পড়ে থাকতো। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হলো। মানুষ না খেতে পেরে রাস্তায় পড়ে মরে থাকতো। দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ মরলো, রক্ষী বাহিনী দিয়ে হাজার হাজার মানুষ সে হত্যা করলো। বাকশালের মাধ্যমে দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম করলো। এগুলো নতুন প্রজন্মের জানা উচিত, এগুলো নতুন প্রজন্মের পড়া উচিত। দেশ ছিলো প্রচন্ড অত্যচারী শাসক গুন্ডা শেখ মুজিবের অধীনে। সে সারাজীবন গুন্ডাদের নিয়ে চলেছে এবং গুন্ডাদের দিয়েই সে শাসন করতে চেয়েছে। আল্লাহর তো বিচার আছে। তারপরে যেভাবে উই রিভল্ট বলে ইয়াং মেজর জিয়াউর রহমান যুদ্ধে নেমেছিলো। এই ইয়াং জেনারেশন। কোন সেনাপ্রধান, কোন জেনারেলরা যুদ্ধে নামেনি। একইভাবে ১৫ই আগস্টে ইয়াং জেনারেশন মেজর, ক্যাপ্টেন, সৈনিক এরা নেমেছিলো মহা বিপ্লবে। জীবনকে বাজি রেখে। একটা দেশ তাঁরা বাচিয়েছিলো। অনেকে বলে এটা সামরিক অভ্যুত্থান । তাদের ধারণা নেই সামরিক অভ্যুত্থান কাকে বলে। সামরিক অভ্যুত্থান তখনই হয় যখন সেনাপ্রধান থেকে শুরু করে সব লেভেলের অফিসার ও সৈনিকেরা এর সঙ্গে জড়িত থাকে। নাইজারে যেটা হয়েছে। সুদানে প্যারামিলিটারি ফোর্স ও সেনাবাহিনী নিজেরা নিজেরা যুদ্ধ করছে।’
তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট যদি না হতো তাহলে আজও শেখ মুজিবের রাজতন্ত্র অথবা ভারতীয় RODS রা যে তাঁকে বসিয়েছিলো এই দেশটাকে গ্রাস করার জন্য, এখনও যে চেষ্টা করছে তাই ঘটে যেতো এতদিন। কিন্তু বাংলার মানুষ তাদের দেশকে ভালোবাসে। বিশ্বাস করে তাদের ইমানকে, এজন্য ইয়াং জেনারেশন এই মহাবিপ্লব ঘটিয়েছিলো। এটা বুঝতে হবে। সেটা না হলে ৭ই নভেম্বর আসতোনা। দেশে গণতন্ত্র বলে কিছু থাকত না।’
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টকে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট এ পরিণত করা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দুটো মূলত একই জিনিস। বরং সিকিউরিটি অ্যাক্ট এ আরেকটা কঠিন জিনিস ঢুকিয়েছে। তা হলো- গুন্ডা মুজিব যাকে তাঁরা বঙ্গবন্ধু বলে, জাতির পিতাও বলে, তাঁকে নিয়ে যদি কেউ কিছু বলে তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হবে, কঠোর শান্তি হবে। আমার কথা হচ্ছে- সে যে জাতির পিতা জনগণ কি হ্যাঁ-না ভোট বা রেফারেন্ডামের মাধ্যমে বলেছে! এমনকি শেখ মুজিবের প্রথম সংবিধান থেকে শুরু করে ২০১১ এর সংবিধান যেটা করেছে মাদার অব মাফিয়া শেখ হাসিনা সেখানের কোথাও তাঁকে জাতির পিতা ঘোষণা করা হয়নি। পনেরোতম সংশোধনীর মাধ্যমে তাঁরা এই বদমায়েশিগুলো করেছে। জাতির পিতা, স্বাধীনতার ঘোষণা, এটা-সেটা ইনকরপোরেট করেছে। কনস্টিটিউশনাল যে ফাইন্ডেশেনস এটাকে ভায়োলেট করেছে। অতএব কিসের জাতির পিতা! আমি তো বলেই যাচ্ছি, প্রমাণ আছে। মুজিব জীবিত থাকতেই আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলেছে, শেখ মুজিবের চরিত্র সম্পর্কে তাঁরা লিখেছে। শেখ মুজিব তো প্রতিবাদ করেনি। সে তো বেঁচে ছিলো। তার মানে এগুলো সত্য, সে ছিলো গুন্ডা মুজিব। মুজিব সম্পর্কে যারা লিখেছেন তাঁরা তো আওয়ামী লীগেরই সিনিয়র নেতা ছিলো। আমি তো কন্টিনিউ বলছি। হাসিনা লণ্ডনে এসে আমার বিরুদ্ধে মামলা করুক। পারবে না, সত্যের জয় হয়। শেখ মুজিবের মৃত্যুর পরে মানুষ মিষ্টি বিতরণ করেছিলো। সমগ্র দেশের মিষ্টি দোকানের মিষ্টিগুলো শেষ হয়ে গিয়েছিলো। শেখ মুজিবের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তৎকালীন স্পিকার মালেক উকিল লণ্ডনে বলেছিলো, ফেরাউনের পতন হয়েছে। দেশের মানুষ ফেরাউনের শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে। কথা তো সত্য, এগুলো তো আওয়ামী লীগের নেতারাই বলেছে। কাজেই বুঝতে হবে, কেনো এটা মহা বিপ্লব দিবস। দেশ মহা বিপ্লবের মাধ্যমে মুক্ত হয়েছিলো। আবার আমরা মাদার অব মাফিয়াকে উৎখাত করে মহা বিপ্লব বলুন আর দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে বলুন করবো, করতে হবে। পদত্যাগ নয়, পদত্যাগ হলো তাঁকে ইচ্ছা দেয়া হচ্ছে। সে পদত্যাগ করলে করলো, না করলে নাই। অতএব কন্ট্রাডিকটরি কিছু নাই। তাঁকে উৎখাত করতে হবে এবং নতুন সংবিধান করতে হবে। জনগণের সংবিধান হলেই দেশ রক্ষা পাবে।’
ভিডিও বার্তায় তিনি আরও বলেন, ‘গুন্ডা মুজিবকে হত্যা করা হয়নি। তাঁর ছেলেরা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে অটোমেটিক ফায়ার করেছে আর্মির প্রতি। না হলে সেখানে গোলাগুলি হতো না। গুন্ডা মুজিবের ছেলেরা আগে আর্মিকে ফায়ার করেছে। তারপর সেখানে গোলাগুলি হয়েছে, গুলিতে সে মারা গেছে। সে পরাজিত হয়েছে। এখানে হত্যার কিছু ঘটেনি। ওখানে স্ট্রেইটওয়ে একটা ব্যাটল হয়েছে অ্যান্ড হি ওয়াজ ডিফিটেড অ্যান্ড কিলড।’
সবশেষে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘শোক দিবস কিসের? দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে যে ব্যাক্তি তাকে সরিয়ে দিয়ে রেভ্যুলেশন করাটাই তো একটা জাতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। প্রত্যেক ধর্মেও এটা আছে। শেখ মুজিব পরাজিত হয়েছে এক মহা বিপ্লবে। কাজেই এখানে শোকের কিছু নাই। ১৫ আগস্ট মহা বিপ্লব দিবস। সারাজীবন তাই থাকবে। আমি বিরোধী দলগুলোকে বলবো আপনারা এটা সেটা না বলে বলুন, এটা মহা বিপ্লব দিবস।’
ড. কর্ণেল শহীদ উদ্দিন খানের এই ফেইসবুক স্ট্যাটাস ও ভিডিও বার্তাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এ পর্যন্ত আড়াই লক্ষের বেশি মানুষ এটা দেখেছেন, নেটিজেনরা এতে লাইক ও কমেন্ট করেছেন।