আগরতলা: সিপিএম রাজ্য সম্পাদক প্রয়াত গৌতম দাশের স্থলাভিষিক্ত হলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী প্রাক্তন সাংসদ এবং জাতি উপজাতির মধ্যে জনপ্রিয় নেতা জীতেন চৌধুরী। সদ্য প্রয়াত গৌতম দাশের রাজ্য সম্পাদকের পদ তড়িঘড়ি পূরণ করার তাগিদ দেখা দেয়। আজ সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে জীতেন চৌধুরীকে রাজ্য সম্পাদক পদে নির্বাচিত করা হয়। এই নির্বাচনে ঐতিহাসিক তাত্পর্য আছে। রাজ্য সিপিএমে অতীতে দশরথ দেবের মতো সংগ্রামী নেতাকে অভিষিক্ত করা হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ সময় এই পদে উপজাতি নেতার অভিষেক খুব একটা দেখা যায়নি।
এইবার সিপিএম রাজ্য কমিটির সম্পাদক পদে জীতেন চৌধুরীর অভিষেক ঐতিহাকি ঘটনা হিসাবে অনেকেই মনে করছেন। শ্রী চৌধুরী দীর্ঘ সময় রাজ্য রাজনীতির আঙিনায় যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিলেন। সিপিএমের ক্ষমতা যখন মধ্য গগনে তখন একসময় জীতেন চৌধুরীকে মুখ্যমন্ত্রী অভিষেক করারও দাবী উঠেছিল। তিনি তথ্য সংসৃকতি, শিল্প ও বাণিজ্য এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং জনপ্রিয়তার মানদন্ডে তিনি এগিয়ে যান। এতে করে সিপিএম অভ্যন্তারিণ রাজনীতিতে টানাপোরেন আসে। জীতেন চৌধুরীর অনিচ্ছ সত্বেও তাঁকে লোকসভার সাংসদ পদে দিল্লীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। শ্রী চৌধুরী পার্টির নির্দেশ মাথা পেতে নিয়েছিলেন। বৃহত্তর আঙিনায় তিনি সাফল্যের নজিরও রেখেছেন। ইতিহাসের চাকা ভিন্ন পথে চলে। গত বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম ক্ষমতা হারায়। দূর্দান্ত প্রতাপশালী দল বিজেপি ক্ষমতার মসনদ দখল করে। তখনই সিপিএম দলে ঘোর অমাবস্যা দেখা দেয়। কিন্তু, জীতেন চৌধুরীর সংগ্রামী মেজাজ অটুট থাকে। তিনি রাজ্য চষে বেড়ান। মানুষ যেখানে আক্রান্ত হন সেখানে ছুটে যান। সেই লড়াকো জীতেন চৌধুরী সিপিএম রাজ্য সম্পাদক পদে বৃত হওয়ায় দল অনেকটাই অক্সিজেন পাবে।
যে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি উপজাতিদের সমর্থনপুষ্ট হয়ে রাজনৈতিক শক্তি বাড়িয়েছিল তাহা এখন অনেকটাই মৃয়মান। পাহাড় এলাকায় যে সিপিএমের একাধিপত্য কায়েম ছিল তাহা তছনছ হয়ে গিয়েছে। এডিসি হাতছাড়া হল। এসবের পেছনে বড় কারণ উপজাতি এলাকায় নেতৃত্বের সংকট। সিপিএম উপজাতি নেতাদের অনেকেই ভোগ বিলাশে মত্ত হয়ে পাহাড়ের ছিন্নমূল গরীব সর্বহারা উপজাতিদের কাছ থেকে সরে গিয়েছে। আত্মস্বার্থ এবং দম্ভ গ্রাস করেছে। উপজাতি এলাকায় শক্তি পুণরোদ্ধার করতে না পারলে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ণ অধরাই থেকে যাবে। একথা সিপিএম নেতারা ভালই বুঝতে পারছেন। সম্ভবত সেই লক্ষ্য সামনে রেখে জীতেন চৌধুরীর মতো লড়াকো নেতাকে রাজ্য সম্পাদক পদে দল বেছে নিল। দলের এই চরম দুর্দিনে জীতেন চৌধুরী কতখানি লড়াই করে শক্তি পুনরুদ্ধার করতে পারেন তাই এখন দেখার সবচেয়ে বড় বিষয়। ইতিহাসের পথ বেয়ে সিপিএম দল ত্রিপুরায় দিনে দিনেই শক্তিহীন হয়েছে। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে কমরেডদের মধ্যে ভোগ বিলাশের প্রবণতা বেড়েছে। সংগ্রামী মেজাজ এখন আর নেই। যে সংগ্রাম দলকে ক্ষমতায় এনেছিল তাকে পুনরুদ্ধার করতে না পারলে দল শক্ত মাটির উপর দাঁড়াতে পারবে না। জীতেন চৌধুরী নিশ্চয়ই তা বুঝতে পেরেছেন এবং নতুন করে দলকে সামনের সারিতে নিয়ে আসতে তাঁর অবদান কতখানি তা ভবিষ্যত্ বলতে পারবে। এদিকে, সিপিএম রাজ্য কমিটির তরফ থেকে বলা হয়েছে দলের আগামী রাজ্য সম্মেলন পর্যন্ত জীতেন চৌধুরীকে রাজ্য সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সিপিএমের তরফ থেকে রাজ্য সম্মেলন পর্যন্ত জীতেন চৌধুরী সম্পাদক পদে থাকবেন বলা হলেও রাজনৈতিক সূত্রে খবর জীতেন চৌধুরীই সিপিএম রাজ্য সম্পাদক পদে থাকবেন সম্মেলনের পরেও। অন্যদিকে, সিপিএম রবিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আজ সি পি আই (এম) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির একটি সংক্ষিপ্ত সভা অন-লাইনে অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশ, দুইজন বিশিষ্ট আইনজীবি অভিজিত্ ঘোষ ও নারায়ণ নাহার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় পার্টির রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশের প্রয়াণের পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন রাজ্য সম্মেলন পর্যন্ত রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে কমরেড জীতেন্দ্র চৌধুরীকে নির্বাচিত করা হয়। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার আহ্বানে আগামী ২৭ সেপ্ঢেম্বর ভারত বন্ধকে রাজ্য কমিটি সমর্থন জানাচ্ছে। রাজ্যে এই ধর্মঘট সফল করার লক্ষ্যে বামফ্রন্টের আহ্বানে আগামী ২১ শে সেপ্ঢেম্বর রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে এক গণকনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। রাজ্য কমিটি এই গণকনভেনশন সফল করার আহ্বান জানাচ্ছে। ১৫ দফা দাবীর ভিত্তিতে চলতি ব্লক ভিত্তিক ডেপুটেশন কর্মসূচী অব্যাহত রাখার জন্য রাজ্য কমিটি আহ্বান জানিয়েছে।