লন্ডন, ১৯ জুলাই- গত শুক্রবার (১৮ জুলাই) দুপুরে মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ) কর্তৃক লন্ডন মুসলিম সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাপানে দ্রুত ইসলামের বিকাশ এবং উচ্চ শিক্ষিত মানুষের ইসলাম গ্রহনের চিত্র তুলে ধরে জাপানের রিটসুমেইকান ইউনিভার্সিটির পোস্ট-ডক্টরাল রিসার্চার ড. ইউসুক ইউসুফ কাটসুরা বলেছেন, সভ্যতার সমৃদ্ধির জন্য ইসলামের কোন বিকল্প নেই। তবে মানব জাতির কাছে এটা যথার্থভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এক্ষেত্রে অমুলিম দেশের মূলধারার মানুষের সাথে মুসলিম কমিউনিটির সম্প্রীতির মেলবন্ধন ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইউনিভার্সিটি অফ দ্য ওয়েস্ট অফ স্কটল্যান্ডের সহকারী অধ্যাপক এমসিএ’র শুরা মেম্বার ও ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন সেক্রেটারি ড. এএসএম আশরাফ মাহমুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে ড. ইউসুকের পরিচিতি ও তাদের সংগঠনিক কার্যক্রম উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ২০১৬ সালে ইসলাম গ্রহণকারী ড. ইউসুক জাপানের ক্রমবর্ধমান মুসলিম সম্প্রদায়, যার মধ্যে ধর্মান্তরিত এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের মুসলিম অন্তর্ভুক্ত, তাদের অধ্যয়নের ক্ষেত্রে একজন শীর্ষস্থানীয় একাডেমিক কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। তার গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও গবেষণা এখন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত ও সমাদৃত। ধর্মান্তরিত হবার ক্ষেত্রে ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের প্রথম দিকের গল্পের বিশ্লেষণ “An Analysis of Conversion Stories from the 1980s to Early 2000s” এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপ অনুশীলনের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে “The Possibilities and Challenges of Intercultural Dialogue Practices in Osaka” গ্রন্থের মাধ্যমে ড. ইউসুক সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাপানে দ্বিতীয় প্রজন্মের মুসলমানদের নেতৃত্বে পরিচালিত প্রথম সরকারী সংগঠন সেইশিন নো কি (Seishin no Ki) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা আকিল কুরেশি, মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশনের (এমসিএ) প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সভাপতি দিলোয়ার হোসেন খান, এমসিএ’র ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি মুসাদ্দিক আহমদ, ওয়ামি’র (ফিলিপাইন) ইনচার্জ জনাব আজহার, ইস্ট লন্ডন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আতিক আহাদ, গ্লোবাল এইড ট্রাস্টের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আখতারুজ্জামান, ড. শামসুল আলম গোলাব, এমসিএ’র ডিজিটাল সেক্রেটারি ইন্জিনিয়ার তাজুল ইসলাম, মেইনল্যান্ড ইউরোপের টিম মেম্বার জনাব আফসার উদ্দিন, দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার যুক্তরাজ্য সংবাদদাতা মাহবুব খানসুর, সমাজসেবী জনাব সাজিদ ও হাসান জামান প্রমুখ।
জাপানের নতুন প্রজন্মকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার অন্যতম সংগঠক আকিল কুরেশি তার প্রাণবন্ত আলোচনায় বলেন, ঐতিহ্যবাহী জাপানি মূল্যবোধের সাথে ইসলামী শিক্ষার সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে তারা দাওয়াতি কাজ করেন। এর প্রতিফলন দর্শকদের উপর স্থায়ী ছাপ ফেলে।
লন্ডনের আলোচকেরা ইউরোপে ইসলাম প্রচারের কর্মকৌশল তুলে ধরে বলেন, মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ) ইসলামের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। মানবসেবায় নিবেদিতপ্রাণ পণ্ডিত, পেশাদার এবং কমিউনিটি নেতাদের মধ্যে আন্তঃধর্মীয় বোঝাপড়া বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলোচনা ও পর্যালোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
ড. আশরাফ মাহমুদ ইউনিভার্সিটি অফ দ্য ওয়েস্ট অফ স্কটল্যান্ডে ডেটা সায়েন্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রোগ্রাম পরিচালনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ইসলাম প্রচারে আমাদেরকে আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাকে গুরুত্বের সাথে কাজে লাগাতে হবে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে ড. ইউসুক জানান, জাপানে এখন প্রায় ৩ লাখ মুসলমানে আবাসস্থল, যার মধ্যে ৭৪ হাজার ধর্মান্তরিত মুসলিম, এবং প্রায় ১৬০টি মসজিদ রয়েছে। জাপানিরা স্বভাবতই ভদ্র, আন্তরিক এবং আধ্যাত্মিকতায় কৌতূহলী। তাদের হৃদয়ে তাকওয়ার আকর্ষণ রযেছে। মুসলমানরা ভালো ব্যবহার এবং মহৎ চরিত্র প্রদর্শন অব্যাহত রাখতে সক্ষম হলে এটি একটি স্থায়ী ছাপ রাখবে এবং দাওয়াতের দরজা খুলে দিতে পারবে বলে তিনি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী।