লন্ডন, ১৮ মার্চ: দৈনিক ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার ডিক্লারেশন বা স্বত্বাধিকার ফিরে পেয়েছেন সংবাদপত্রটির সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমান। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদের সই করা এক অফিস আদেশে তাকে স্বত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
ঢাকা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (প্রকাশনা ও ছাপাখানা শাখা) নুসরাত নওশীন এ তথ্য জানিয়েছেন।
অফিস আদেশ অনুযায়ী, দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকাটি প্রকাশের জন্য যে অনুমোদিত প্রেস রয়েছে সেখান থেকে ছাপা হচ্ছে না। কিন্তু প্রিন্টার্স লাইনে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে মর্মে শফিক রেহমান অভিযোগ জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার পর এবং অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পত্রিকাটি মুদ্রণের ডিক্লেয়ারেশন বা ঘোষণাপত্র বাতিল করা হয়।
আদেশ অনুযায়ী, দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকা প্রকাশে ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন, ১৯৭৩ এর ১০ ধারার লঙ্ঘন হয়েছে। এ কারণে ‘দৈনিক যায়যায়দিন’ পত্রিকার প্রকাশক ও মুদ্রাকর সাঈদ হোসেন চৌধুরীর নামে যে ঘোষণাপত্র ছিল তা বাতিল করা হয়।
এর আগে ১২ মার্চ, বুধবার দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার ‘ডিক্লারেশন’ বাতিল করা হয়েছিলো। প্রকাশনার নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো বলে ঢাকা জেলা প্রশাসন সূত্র সাপ্তাহিক সুরমা’কে জানিয়েছিলো। সূত্রটি আরও জানিয়েছিলো, পত্রিকাটির সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমানের করা আবেদনে প্রকাশনা লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, দৈনিক ‘যায়যায়দিন’ শফিক রেহমানের গড়া পত্রিকা। দর্শন শাস্ত্রের পণ্ডিত অধ্যাপক সাঈদুর রহমানের ছেলে সাংবাদিক শফিক রেহমান ১৯৮৪ সালে এর যাত্রা শুরু করেছিলেন সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসাবে। স্বৈরশাসক এরশাদের সামরিক শাসনামলে সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন শফিক রেহমান। তখন তার পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ করাসহ তাকে দেশছাড়াও হতে হয়েছিল। ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনে এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশে ফিরে জনপ্রিয় এই সাপ্তাহিকটি পুনরায় প্রকাশ শুরু করেন শফিক রেহমান। ১৯৯৯ সালে তিনি ‘যায়যায়দিন প্রতিদিন’ নামে ট্যাবলয়েড দৈনিক সংবাদপত্র বের করেন। ২০০৬ সালে বড় পরিসরে যায়যায়দিন দৈনিক হিসাবে যাত্রা শুরু করে। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ‘যায়যায়দিন মিডিয়াপ্লেক্স’ও গড়ে তোলেন শফিক রেহমান। কিন্তু তার কয়েকমাসের মধ্যে বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে যায়যায়দিনের কর্তৃত্ব হারান শফিক রেহমান। যায়যায়দিন হারালেও আওয়ামী লীগ সরকার আমলের শুরুতে দেশে থেকে মৌচাকে ঢিল নামে একটি পত্রিকা চালিয়ে যাচ্ছিলেন শফিক রেহমান। এর মধ্যে ২০১৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার ষড়যন্ত্রের মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগের এক মামলায় আসামি হন তিনি। পরের বছর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েক মাস কারাগারে থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর কিছু দিন দেশেই ছিলেন শফিক রেহমান। ২০১৮ সালে তিনি যুক্তরাজ্যে চলে আসেন। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে মামলায় জড়িয়ে দেশছাড়া হওয়া শফিক রেহমান ছয় বছর বাদে গত আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশে ফিরে ‘যায়যায়দিন’ ফিরে পাওয়ার তৎপরতা শুরু করেন। সাঈদ হোসেন চৌধুরীর নামে ডিক্লেয়ারেশন বাতিলের পর শফিক রহমান আবেদন করে এখন নিজের নামে ডিক্লেয়ারেশন পেলেন।