শিরোনাম
শনি. ডিসে ৬, ২০২৫

পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’

  • পিন্ডিতে বাংলাদেশের ইতিহাস।
  • আন্দোলনে নিহত পরিবারকে সিরিজ সেরার অর্থ দিবেন মিরাজ।

ক্রীড়া ডেস্ক:  পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয় দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হলো। ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ, লিখলো রূপকথার গল্প। মুশফিক-মিরাজদের হাত ধরে বাংলার ক্রিকেটে উঠল নতুন সূর্য। আগে যা কখনো হয়নি তাই করে দেখাল টাইগাররা, প্রথমবারের মতো টেস্টে পাকিস্তানকে সিরিজ হারালো তারা। দিলো হোয়াইটওয়াশের লজ্জা।

মঞ্চ প্রস্তুত ছিল। শুধু প্রয়োজন ছিল কোনো অঘটন ঘটতে না দেয়ার। সেই কাজটা খুব ভালো করেই করলেন মুমিনুল-মুশফিকরা। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) ১৪২ রানের ব্যবধান দেখেশুনেই পাড়ি দিলো বাংলাদেশ। রাওয়ালপিন্ডির দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে পেল ৬ উইকেটের জয়।

জয় থেকে ১৪২ রান পিছিয়ে থেকে মঙ্গলবার শেষ দিনে মাঠে নামে বাংলাদেশ। তবে শুরুটা ভালো হয়নি। আগের দিনের আগ্রাসন ধরে রাখতে পারেননি জাকির হাসান। আগের দিনের ৩১-এর সাথে আজ আর ৯ রান যোগ করে ফেরেন তিনি। ৫৮ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।

সাদমান ইসলাম খেলছিলেন দেখেশুনেই। তবে থিতু হয়েও ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। ২৪ রান করে ধরেন সাজঘরের পথ। ৭০ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক নাজমুল শান্ত।

মুমিনুল হককে সাথে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে লড়াই করেন দু’জনে। খুব হিসাব করে খেলতে থাকেন দুই ব্যাটার। তাড়াহুড়ো করছেন না খুব একটা। তবে দলের ওপর চাপ আসতে দেননি। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগেই দুজন মিলে গড়লেন পঞ্চাশছোঁয়া জুটি।

বিরতির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি শান্ত। সালমান আগার সাদামাটা এক বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ৮২ বলে করেন ৩৮ রান। ভাঙে ৫৭ রানের জুটি। তবে মুমিনুল আর মুশফিক মিলে এগিয়ে নিতে থাকেন রান।

তবে থিতু হওয়ার পর অযথা শট খেলতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন মুমিনুল। শেষ হয় তার ৭১ বলে ৩৪ রানের ইনিংস। তখন জয় থেকে মাত্র ৩২ রান দূরে বাংলাদেশ। এই দূরত্ব ঘুচান সাকিব-মুশফিক। মুশফিক ৫১ বলে ২২ ও সাকিব অপরাজিত থাকেন ৪৩ বলে ২১ রানে।

উল্লেখ্য, রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে শুক্রবার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। যেখানে টসে হেরে আগে ব্যাট করে প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রান করে স্বাগতিকরা। সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেন সাইম আইয়ুব। ৫ উইকেট নেন মেহেদী মিরাজ, ৩ উইকেট যায় তাসকিনের ঝুলিতে।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৬ রানে ৬ উইকেট হারালেও লিটন দাসের ১৩৮ রানের ইনিংসে ভর করে বিপদ কাটায় বাংলাদেশ। ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন মেহেদী মিরাজ। ২৬২ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। ১২ রানের লিড পায় পাকিস্তান।

লিড নিয়ে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি পাকিস্তান। হাসান মাহমুদ আর নাহিদ রানার বোলিং তোপে আটকে যায় ১৭২ রানে। ফলে লিডসহ বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৮৫ রান।

এরপর ব্যাট করতে নেমে ৭ ওভার শেষে বিনা উইকেটে ৪৩ রান তুলে বাংলাদেশ। তবে এরপরই আলোস্বল্পতার কারণে বন্ধ হয় খেলা। নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন ঘণ্টা আগেই শেষ হয় চতুর্থ দিন। ফলে খেলা গড়ায় রোমাঞ্চকর পঞ্চম দিনে।

এই সিরিজ জয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি দলকে ভবিষ্যতে আরও বড় অর্জনের জন্য উৎসাহিত করবে। টাইগারদের ব্যাটিং, বোলিং, এবং ফিল্ডিংয়ের প্রতিটি বিভাগে উন্নতির ফলে এই সিরিজ জয় সম্ভব হয়েছে, যা ভবিষ্যতে দলকে আরও শক্তিশালী করবে।

এই অর্জন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থান আরও সুসংহত করবে।

আন্দোলনে নিহত রিকশাচালকের পরিবারকে সিরিজ সেরার অর্থ দান করবেন মিরাজ

পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য সিরিজ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে এই পুরস্কারের অর্থ তিনি নিজের জন্য রাখছেন না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত এক রিকশাচালকের পরিবারকে এই অর্থ দান করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাওয়ালপিন্ডিতে ম্যাচসেরার পুরস্কার গ্রহণের সময় এই ঘোষণা দেন মিরাজ। এই সিরিজে দুই ম্যাচে ১৫৫ রান এবং ১০ উইকেট নিয়ে তিনি দলের সাফল্যে বড় ভূমিকা রেখেছেন।

প্রথম টেস্টে মুশফিকুর রহিম ম্যাচ সেরা হয়ে সেই অর্থ বন্যার্তদের সহায়তায় দান করেছিলেন। এবার মিরাজ তার সিরিজ সেরার অর্থ সেই রিকশাচালকের পরিবারকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রান করে, এরপর বাংলাদেশ ২৬২ রানে অলআউট হলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান মাত্র ১৭২ রানে গুটিয়ে যায়। ১৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ৬ উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে এবং পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে।

মিরাজ প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে বাংলাদেশের জয়ে অবদান রাখেন। এই অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য তিনি সিরিজ সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন এবং তার পুরস্কারের অর্থ মানবিক কাজে দান করার এই মহৎ উদ্যোগ নেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *