- আমেরিকায় বসে তুমি বেশি বুইঝো না, আমি দেখতেছি: হাসিনা
- মানুষের বাঁচা-মরা নিয়ে হাসিনার কোনো মাথাব্যথা ছিল না: মেনন
লণ্ডন, ২ সেপ্টেম্বর- পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন সোহেল তাজ। ওই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন সাহারা খাতুন। আর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন সোহেল তাজ। অভিযোগ ওঠে, পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনার পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন সোহেল তাজও। যদিও সোহেল তাজের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ঘটনার সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন।
এ বিষয়ে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন সোহেল তাজ। তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা জেনে না জেনে বা বুঝে না বুঝে কোনো প্রমাণ ছাড়াই আমাকে নিয়ে পিলখানা হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত থাকার মিথ্যা অপপ্রচার করছেন তাদের উদ্দেশে বলব- এই কাজটা ঠিক না। আমিও বাংলাদেশের সব বিবেকবান মানুষের মতো হতভম্ব হয়েছিলাম, স্তম্ভিত হয়েছিলাম।’
অভিযোগের বিষয়ে দেশের একটি গণমাধ্যমকে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বসে যখন ঘটনার খবর পান তখনই তিনি পুলিশের আইজি’র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তার পরামর্শ না শুনে তাকে ধমক দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে কিছু মহল আমাকে জড়াতে চেষ্টা করেছে। এরকম নিকৃষ্ট একিউজিশন খুবই দুঃখজনক। একজন নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে এমন একটা কালিমা দেওয়া ঠিক না।’
সোহেল তাজ আরও বলেন, ‘আমি তখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলাম। কিন্তু ঘটনার সময় আমি আমেরিকা ছিলাম। আমার মেয়ের জন্মদিনও ছিল আর আমার ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয়ের হার্ট সার্জারি হচ্ছিল নিউ ইয়র্কে। পিলখানার পাশেই আমার এক আত্মীয়ের অফিস। আমেরিকা ও বাংলাদেশের মধ্যে সময় ব্যবধান ছিল ১১ ঘণ্টা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমার ওই আত্মীয় কল করে বলেন, সোহেল এখানে তো অনেক গোলাগুলি হচ্ছে। তখন আমি বলি গোলাগুলি মানে? তখন তিনি বলেন, গোলাগুলি মানে অনেক গোলাগুলি। তখন সঙ্গে সঙ্গে আমি ফোন দিলাম তৎকালীন আইজিপি নূর মোহাম্মদকে। ওনাকে বললাম আইজি সাহেব পরিস্থিতি কী? কি হচ্ছে সেখানে। ওনি বললেন, গোলাগুলি হচ্ছে পিলখানায়। আমি বললাম গোলাগুলি হচ্ছে তো আপনারা কি করছেন? তিনি বললেন আমরা তো আছি। এ কথা শুনে আমি বলেছিলাম পুলিশ, র্যাব, আনসার, এপিবিএন সব ডাকেন। সবাইকে দিয়ে পুরো পিলখানা ঘেরাও দেন। মুভিং করতে হবে। ওনি বললেন, আমরা তো মুভিং করছি। প্রয়োজনে সেনবাহিনীকে ডাকার কথাও বলি। আমার কথা শুনে তখন আইজি আমাকে বললেন, স্যার মন্ত্রী মহোদয় সঙ্গে আছেন। তার মানে ওনি আমাকে বলতে চাচ্ছেন আপনার কথা আমি মানতে পারবো না কারণ সিনিয়র আছেন। তখন আমি বুঝে গেলাম তিনি আমার কথা শুনবেন না কারণ আমার সিনিয়র (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) আছেন।’
সোহেল তাজ বলেন, ‘আমার মাথা তখন গরম হয়ে গেছে। এরকম ক্রাইসিস হলে পুরো এলাকা ঘেরাও করতে হয়। যাতে ভেতরে যারা আছে তারা যেন বুঝতে পারে তাদের পালাবার কোনো পথ নাই। পালানোর পথ যদি না থাকে তবে তারা যা করতে চাচ্ছে সেটা নাও করতে পারে। সেজন্য বলেছিলাম পুরো এলাকা সবদিক দিয়ে ঘেরাও করতে হবে। আইজি’র কথা শুনে আমি থেমে যাইনি। ফোন রেখে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনকে ফোন করলাম। ওনাকেও আমি একই কথা বললাম। ঘেরাও দেয়ার জন্য। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে কল করার কথাও বলি। ওনি তখন আমাকে বললেন বাবা এটা তো আপা (শেখ হাসিনা) দেখছেন। আমি তখনও থামি নাই। প্রধানমন্ত্রীকে কল করে একই কথা বলেছি। যা ফোর্স আছে তা দিয়ে ঘেরাও করে রাখতে হবে। আর্মি আসার আগ পর্যন্ত এটা করতে হবে। ওনি আমাকে বললেন, তুমি আমেরিকায় বসে বসে বেশি বুইঝো না। আমি দেখতেছি। তখন আমার আর কিছু করার ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘দেশে এসে আমি যা দেখলাম সেটাতেও অবাক হয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল বিডিআর। কিন্তু অলৌকিকভাবে সব কাজ হয়ে যাচ্ছে। আমি দেখতে পারছি না কি হচ্ছে। কো-অর্ডিনেটর করে দেয়া হয়েছে কর্নেল ফারুক খানকে। ওনি তখন বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রীকে কেন এই ঘটনার কো-অর্ডিনেটর করতে হবে? তারপর থেকে সবকিছু অদৃশ্য হয়ে গেল। আমাদের হাতে আর কিছুই ছিল না। বিডিআরের ‘ব’ পর্যন্ত আমরা বলতাম না। কারণ আমাদের কাছে কেউ জানতেও চায়নি, বলেওনি। এভরিথিং ওয়াজ ডান বাই দ্য কো-অর্ডিনেটর। আমার কাছে সবই উদ্ভট লেগেছে। কিন্তু প্রমাণ তো নাই। প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের এটাও একটা কারণ ছিল। তাই বিডিআর বিদ্রোহের পরপরই আমি পদত্যাগ করেছি।’
বিডিআর বিদ্রোহের নেপথ্য কী ছিল? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী থাকাকালীনই আমি কিছু দেখিনি, কিছুই টের পেতাম না। কোথা দিয়ে কি চলে যাচ্ছে, কী হয়ে যাচ্ছে কিছুই জানতাম না। আর দায়িত্ব ছাড়ার পর আর কিছু দেখার বা জানার সুযোগ ছিল না।’
সোহেল তাজ জানান, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরামর্শ না শুনে তাকে ধমক দিয়ে বলেছিলেন ‘আমেরিকায় বসে তুমি বেশি বুইঝো না। আমি দেখতেছি। ’
এদিকে ছাত্র জনতার গণআন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের আলোচিত ডজনখানেক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
তাদের মধ্যে অনেককেই দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আর জিজ্ঞাসাবাদের বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি শেখ হাসিনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মেনন বলেছেন, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার কারণে এ দেশের মানুষের প্রতি চরম ক্ষোভ ছিল শেখ হাসিনার। তাই দেশের মানুষ মরুক বা বাঁচুক তাতে তার কোনো মাথাব্যথা ছিল না। তিনি চেয়েছিলেন শুধু ক্ষমতা। আজীবন ক্ষমতায় থাকার লোভ তাকে পেয়ে বসেছিল। এই মানসিকতাই তার জন্য কাল হয়েছে।
মেনন বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা অনেক পরামর্শ দিয়েছিলাম। তিনি আমাদের কোনো কথাই শোনেননি।
গত ২২ আগস্ট রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে রাশেদ খান মেননকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর নিউমার্কেট থানার ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।