ঢাকা, বাংলাদেশ: ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বঙ্গবাজারে ফায়ার সার্ভিস হেডকোয়ার্টারের পাশে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হাজারো ব্যবসায়ীর স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বঙ্গবাজারের আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশে-পাশের মার্কেট গুলোতে। প্রশ্ন উঠেছে ফায়ার সার্ভিসের হেডকোয়ার্টারের পাশে এই অগ্নিকাণ্ড শুরুতেই নিয়ন্ত্রণ করা গেল না কেন? ফায়ার সার্ভিস হেডকোয়ার্টার থেকে দুই মিনিটের রাস্তাও নয় বঙ্গবাজার। তারপরও আগুন এতটা ছড়িয়ে পড়ল কিভাবে? এই প্রশ্ন উঠেছে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীসহ দোকান কর্মচারীদের মাঝে।
আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর ফায়ার সার্ভিসের ৪৮ ইউনিটসহ সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী ও বিজিবি আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। ফায়ার সার্ভিসসহ এসব বাহিনী গুলোর সদস্যদের প্রচেষ্টায় প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের মতে শুরুতেই ফায়ার সার্ভিস সচেষ্ট হলে আগুন এভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারত না।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৪ঠা এপ্রিল) ভোরে মার্কেটটিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। সকাল ৬টা ১০ মিনিটে মার্কেটটিতে আগুনের খবর পেয়ে ৬টা ১২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিকভাবে আগুন নিভাতে ধীর পদক্ষেপ নেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। আগুন ছড়িয়ে পড়লে একে একে যোগ দেয় সংস্থাটির ৪৮টি ইউনিট। তাদের সাথে যোগ দেয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং র্যাবের বিভিন্ন ইউনিট।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। কেন্দ্রীয় ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক গণমাধ্যমকে জানান, মোট ৪৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশ নেয়। আহতের সঠিক সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
আগুনে বঙ্গবাজার ও আশপাশে কত দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা না জানা গেলেও ধারণা করা হচ্ছে এই সংখ্যা ৫ হাজারের মতো। এসব দোকানে কাজ করতো কয়েক হাজার কর্মচারী। ধারণা করা হচ্ছে ৫০ হাজারের মত পরিবার এই অগ্নিকাণ্ডে সঙ্কটের মুখে পড়েছে।
ঈদ সামনে রেখে বঙ্গবাজার ও আশে-পাশের মার্কেট গুলোর দোকানী এবং কর্মচারীদের অনেক স্বপ্ন থাকে। আগুনে স্বপ্ন পুড়ে ছাই হওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ নিয়ে সঙ্কটে পড়বে অনেক দোকানী ও কর্মচারীরা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, বঙ্গবাজার মার্কেটে আড়াই হাজারসহ আশপাশের মার্কেটে আগুনে প্রায় ৫ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ আগুন জ্বলতে দেখেন তারা। খবর পেয়ে উদ্ধারে অংশ নিতে আসে ফায়ার সার্ভিস। এরপর অল্প সময়েই বাড়তে থাকে বাহিনীর ইউনিটের সংখ্যা।
এক পর্যায়ে পানির সংকটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রমনা এলাকা থেকে বহন করে নেয়া হয় পানি। হাতিরঝিল থেকেও হেলিকপ্টারে পানি নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে দেখা যায়। বাতাসে আশপাশের ভবনে চলে যায় আগুন।
ওই এলাকায় সড়ক বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় র্যাব। তবে এতসবের মধ্যেও উৎসুক জনতার ভিড় ছিল লক্ষ্য করার মতো।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ কর্মীসহ ১২ জনের মতো আগুনের ঘটনায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসেন। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে দুপুর সোয়া ১টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রবেশ গেটে ব্রিফিংয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.মাইন উদ্দিন জানান তিন কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পানির অভাব, বাতাস ও উৎসুক জনতা এই তিন কারণে বঙ্গবাজারের আগুন নেভাতে দেরি হয়েছে। ২০১৯ সালে এই মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করি আমরা। এর পরে ১০ বার নোটিস দেয়া হয়েছে। তারা আমলে নেয় নাই।’
আগুনে প্রায় ৫ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দাবি:
রাজধানীর বঙ্গবাজারে মঙ্গলবার সকালে ধরা আগুনে প্রায় ৫ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।
বঙ্গবাজারের আড়াই হাজারসহ আশপাশের মার্কেটের আরও প্রায় আড়াই হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।
অগ্নিদুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে তিনি বলেন, এ আগুনে আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পূরণে প্রাথমিকভাবে থোক বরাদ্দ হিসেবে ৭০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমাদের জানা মতে, শুধু বঙ্গবাজার কাঠের মার্কেটেই আড়াই হাজারের মতো দোকান রয়েছে। এখানে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা দোকান করেন। সামনে ঈদ। সবাই ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনার পণ্য তুলেছেন দোকানে। এমন সময় এই অগ্নিকাণ্ড বড় ধরণের ক্ষতি ডেকে এনেছে।
ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, এই ব্যবসায়ীদের পুঁজি বলতে দোকানের মালামালই। মালামাল পুড়ে গেলে তাদের আসলে পুঁজি বলতে সব শেষ। এখন তাদের জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, রমজানের ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসায় ক্ষতি পুষিয়ে দিতে প্রাথমিকভাবে ৭০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি।
বঙ্গবাজারের আগুন যেভাবে ছড়াল ইসলামিয়া মার্কেটে:
রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজারের গোডাউন এলাকা থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন বলছেন, বঙ্গবাজার কাঠ ও টিনের অবকাঠামো দিয়ে তৈরি। তাই আগুণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগুনের পরপরই অনেক ব্যবসায়ী দোকানের মালামাল বের করে সামনের নিউ সেক্রেটারি সড়কে রাখেন। একদিকে আগুন, অন্যদিকে মালামাল বের করার কারণে সামনের রাস্তায় মালামাল স্তূপ করতে থাকেন ব্যবসায়ীরা। ঘণ্টাখানেক জ্বলার পর সকাল ৭টার দিকে বঙ্গবাজারের একাংশ ধসে পড়ে। আর এতেই ঘটে বিপত্তি। রাস্তায় থাকা কাপড়ের স্তূপের মাধ্যমেই নিউ সেক্রেটারি রোডের অপর পাশে থাকা বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেট ও বঙ্গ হোমিও মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রে জানা গেছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনী সম্মিলিতভাবে কাজ করেছে। বিমানবাহিনীর সাহায্যকারী দল ও হেলিকপ্টার যোগ দেয় আগুণ নিয়ন্ত্রণের জন্য।
৩ কারণে আগুনে নেভাতে দেরি:
পানির অভাব, বাতাস ও উৎসুক জনতা এই তিন কারণে বঙ্গবাজারের আগুন নেভাতে দেরি হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রবেশ গেটে ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.মাইন উদ্দিন।
তিনি বলেন, পানির অভাব, বাতাস ও উৎসুক জনতা এই তিন কারণে বঙ্গবাজারের আগুন নেভাতে দেরি হয়েছে। ২০১৯ সালে এই মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করি আমরা। এর পরে ১০ বার নোটিশ দিয়ে জানানো হয়েছে মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু কেউ এতে সারা দেয়নি।