লণ্ডন, ৫ সেপ্টেম্বর: নয়াদিল্লি-ভিত্তিক সিনিয়র সাংবাদিক চন্দন নন্দীর ‘Caught in a cleft stick’ অর্থাৎ ‘বিভক্ত দুপথের মাথায় আটকে যাওয়া’ শিরোনামে একটা নিবন্ধ গত ২ সেপ্টেম্বর শনিবার বাংলাদেশের প্রধান নিউজ পোর্টাল www.bdnews24.com-এ প্রকাশের দুই ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে, বাংলাদেশ ও ভারতের পাঠকদের জন্য নিউজ পোর্টালটির ইংরেজি এবং বাংলা উভয় ওয়েবসাইটই বাংলাদেশ সরকার ব্লক করে দিয়েছে।
চন্দন নন্দীর এই নিবন্ধটি ৩ সেপ্টেম্বর রবিবার www.nenews.in নামে নর্থ-ইস্টের একটি নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে। এই নিউজ পোর্টালে লেখাটার শুরুতেই দাবি করা হয়েছে যে, লেখাটা বিডিনিউজ২৪-এ প্রকাশিত হবার দু’ঘন্টা পরেই বিডিনিউজ২৪-এর বাংলা ও ইংরেজি ওয়েব সাইট বাংলাদেশ ও ভারতের দর্শকেরা কেউ দেখতে পারছে না, ব্লক করে দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বিডিনিউজ২৪ তাদের ফেইসবুক পেইজে অসহায়ের মত লিখে রেখেছে,”আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এমন সব কারণে আমাদের সংবাদ পোর্টালে পাঠকদের নিয়মিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইছি। আমরা পাঠকদের আশ্বস্ত করছি, ওয়েবসাইটটি ফিরিয়ে আনতে আমাদের লড়াই অব্যাহত রয়েছে। আপাতত সংবাদ পেতে চোখ রাখুন আমাদের ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম, এক্স পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে”।
বিডিনিউজ২৪ সরকার বা ভারতের ঘনিষ্ঠ বলে এমন এক পরিচিতি কারো কারো চোখে থাকা সত্বেও ২০১৮ সালের পর এটা বিডিনিউজের দ্বিতীয়বার ব্লকড হওয়া। বিডিনিউজ ২৪এর বিরুদ্ধে এর আগে সরকারের একটি প্রতাপশালী অংশ রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করে তাদের ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে রেখেছে। দুদকের তদন্তের নামে একটি খড়্গ ঝুলিয়ে রেখেছে। এখন যা হচ্ছে তার একটি লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আপাতদৃশ্যে সাইটটি বন্ধ করা হয়নি, যাতে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ নাকচ করে দেওয়া যায়। কিন্তু ওয়েবসাইটটি ফাঁকা করে দিয়ে অচল করে দেওয়া হয়েছে যেভাবে তাকে বিডিনিউজ ‘তাদের ক্ষমতার বাইরে’ বলে অভিহিত করেছে। এই কৌশলটা হচ্ছে এমনভাবে জখম করা যাতে আহত ব্যক্তি চিৎকার করারও সুযোগ না পায় এবং উঠে দাঁড়াতেও না পারে। বিডিনিউজ২৪-এর এই অবস্থাকে সাংবাদিকতার ওপর আঘাত ছাড়া আর কিছু বলার কোনো অবকাশ দেখি না। একটা নিবন্ধ প্রকাশের জন্য কোন মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া এটা কোন নীতি বা পলিসির মধ্যে পড়ে না। এটা সংবাদ মাধ্যমের জন্য খুব ভাল লক্ষণ না।
চন্দন নন্দী ভারতের গোয়েন্দা বিভাগের কোলে বসে তাঁদের চিরাচরিত চীন বিরোধী ভাবের উপর দাঁড়িয়ে এই নিবন্ধটি লিখেছেন। ভারতের নিজ মুখের খাদ্য “বাংলাদেশ” কে চীন ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুরো নিবন্ধে তিনি এমনটাই অনুভব করেছেন। আলোচ্য নিবন্ধে বাংলাদেশ সরকারকে তিনি অভিযুক্ত করেছেন। শেখ হাসিনার পাঁচজন মন্ত্রীতে ভারতের কথিত আপত্তি প্রসঙ্গেও তিনি উল্লেখ করেছেন। এবং সরকার আগামীতে আরও গুম খুন করবে বলে তিনি জানিয়েছেন। প্রায় প্রতি প্যারাগ্রাফের শুরুতে তিনি “Senior Awami League sources” এই অস্পষ্ট ও অর্থহীন “সুত্র” এর বরাতে লিখে গেছেন। এতে সাংবাদিকতার নুন্যতম কোন নীতি মানা হয়নি। এটা কোন জার্নালিজম হয়নি। কিন্তু তাই বলে ওই একটা মাত্র লেখার কারণে পুরো নিউজ পোর্টালটিই ফাঁকা বা বন্ধ করে দেয়াটা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য না। কিছুদিন আগে আনন্দবাজারের অগ্নি রায় এর লেখা যা পরে ডয়েচ ভেলে, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে ছাপা হয়েছিল, সেটাও জার্নালিজম ছিল না। তাহলে তাদের বেলায় সরকার কেনো সাইট ফাঁকা বা ব্লক বা কোন বাধা দেয়নি? প্রপাগান্ডাগুলো সরকারের পক্ষে গিয়েছিলো বলে? সরকারি দলের কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর জন্য সেই মিথা প্রপাগান্ডা দু‘দেশের সরকারের “জানাশুনা” লোকেরা ঘটিয়েছিলো বলে?
২০০৮ সালে বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদ জগতে শীর্ষ নিউজ নামে একটি অনলাইন পোর্টাল দ্রুত সময়ে নিউজ প্রকাশ শুরু করে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সেটি কয়েক দফা বন্ধ করে দিয়েছিলো। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের পথ কখনোই বন্ধ করা উচিত নয়। মতের অমিল হলেই নিউজ পোর্টাল ফাঁকা করে দিয়ে অচল করে দেওয়া বা বন্ধ বা হ্যাকিং করা অন্যায়। আশাকরি সরকারের বোধোদয় হবে এবং দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করবে। বিডিনিউজ২৪-এর যাত্রা অব্যহত থাকবে।