মুষলধারে বৃষ্টি ত্রিপুরায় চারটি জেলায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে খোয়াই জেলায়। সারা রাজ্যে মোট ২১টি ত্রাণ শিবিরে ৫৫৬ পরিবারের ২১৩৭ জন আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের প্রশাসনের তরফে ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া, বৃষ্টিপাতে মোট ৯টি বসতবাড়ি সম্পুর্ন, ৭৮টি মারাত্মকভাবে এবং ৫২১টি বসতবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু এলাকা জলমগ্ণ হয়ে পড়েছে। ধলাই জেলায় আমবাসা মহকুমায় নাইলাফা পাড়া এলাকায় জাতীয় সড়কে জল জমে যাওয়ায় একটি পেট্রল ট্যাঙ্কার এবং একটি পণ্যবাহী গাড়ি উল্টে গেছে।
রাজ্য দুযর্োগ মোকাবিলা দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, অবিরাম বর্ষণে খোয়াই নদীর জল বিপদসীমার খুব কাছাকাছি বইছে। জেলাজুড়ে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে, বহু মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনের তরফে খোয়াই জেলায় ১৩টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। তাতে ৩৫৩ পরিবারের ১৪১২ জন সদস্য আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে, খোয়াই জেলায় ৩৬৩টি বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্থ সিপাহীজলা জেলায় বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে, স্থানীয় মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। জেলা প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী সিপাহিজলা জেলায় ৮টি ত্রাণ শিবিরে ২০৩ পরিবারের ৭২৫ জন সদস্য আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের প্রশাসনের তরফে ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। এদিকে, সিপাহীজলা জেলায় ১টি বসতঘর সম্পুর্ন, ৬৩টি মারাত্মকভাবে এবং ৬৯টি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এদিকে, ধলাই জেলায় ত্রাণ শিবির খোলার মতো পরিস্থিতি হয়নি। কিন্ত, ১টি বসতঘর মারাত্মকভাবে এবং ৯টি বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া, আঠারমুড়া পাহাড়ের ৪৫ মাইল এলাকায় আজ গাছ ভেঙ্গে পরে জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ ছিল দীর্ঘক্ষণ। অন্যদিকে, আমবাসা মহকুমাধীন নাইলাফা পাড়ার শালবাগান এলাকায় জাতীয় সড়কে জল জমে দুইটি গাড়ি দুর্ঘটনাগ্রস্থ হয়েছে। স্থানীয় সুত্রে খবর, ওই স্থানে একটি কালভার্ট রয়েছে। তার নিচে দিয়ে জল যায়। কিন্ত, গতকাল রাতের ভারী বৃষ্টিপাতে কালভার্টের উভয়দিকে মাটি জমে যায়। তাতে, সমস্ত জল জমে জাতীয় সড়ক জলমগ্ণ হয়ে পড়ে। গাড়ির চালক মনে করেন, কালভার্টের পাশ দিয়ে চলে যাবেন। কিন্ত, মাটি নরম হওয়ায় গাড়ি উল্টে যায়। তাতে, দীর্ঘক্ষণ ওই স্থান দিয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
তেমনি, ভারী বৃষ্টিপাতে গোমতি জেলায় ৮টি বসতঘর সম্পুর্ন, ১৪টি মারাত্মকভাবে এবং ৮০টি বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের তরফে গোমতি জেলায় উদয়পুরে আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ ৭৮টি বাড়ির মালিকের হাতে ২.৪ লক্ষ টাকা এবং সম্পুর্ন ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ির মালিককে ৩৫ হাজার টাকা ও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ির মালিককে ৫২ হাজার টাকা প্রাথমিক সহায়তা বাবদ প্রদান করা হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, সারা রাজ্যেই ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজ চলছে।
এদিকে, অনুমান ছাড়িয়ে ৪৮৪ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে ত্রিপুরায়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সারা ত্রিপুরায় ৯১.২ এমএম বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিন্তু অনুমান ছিল, ১৫.৬এমএম বৃষ্টিপাত হবে। এক্ষেত্রে অনুমানের অনেক বেশি বৃষ্টিপাতের দরুন ত্রিপুরায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। নদীগুলি ফুঁসছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
ত্রিপুরায় জেলাভিত্তিক বৃষ্টিপাতে দক্ষিণ জেলায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এর পর পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা, সিপাহিজলা জেলা, ধলাই জেলা, গোমতি জেলা, উত্তর ত্রিপুরা জেলা, খোয়াই জেলা এবং উনকোটি জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, গতকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত এবং দিনভর বৃষ্টিপাতে চলতি বর্ষা মরশুমে ইতিমধ্যে স্বাভাবিকের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে গেছে। আগামী কয়েকদিনে আরো ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে চলতি মরশুমে বৃষ্টিপাত অন্যান্য বছরকে ছাপিয়ে যাবে, তা সহজেই আন্দাজ করা যাচ্ছে।