- রাজকোষের অপচয়
বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বোচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকার জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের ‘খুশি রাখতে’ পদোন্নতি দিচ্ছে ও বিদেশ সফরে পাঠাচ্ছে। ইতোমধ্যে পদ না থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের ‘খুশি রাখতে’ সামনে আরও পদোন্নতি আসছে বলে জানা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আগের দুই জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও ভোটের আগে জনপ্রশাসনে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের খুশি করতে ও সন্তুষ্ট রাখতেই পদ না থাকলেও ঢালাওভাবে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে এভাবে পদোন্নতি দিয়েছে, এবারও তা-ই হচ্ছে।
গত সোমবার রাতে দুটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২২১ জন উপসচিব ও সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম সচিব করা হয়েছে। এর আগে গত মে মাসে ১১৪ জন অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। আগামী মাসে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৯তম ব্যাচকে (চাকরিতে যোগদান ২০১১) পদোন্নতি দেওয়া হবে বলে জনপ্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। ১০ জন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুজন করে এবং ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের একজন করে রয়েছেন।
সর্বশেষ যে ২২১ জনকে উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে সরকারের ১১ জন হলেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একান্ত সচিব (পিএস)। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীর পিএস আহমদ কবীর, বাণিজ্যমন্ত্রীর পিএস মোহাম্মদ মাসুকুর রহমান সিকদার, সমাজকল্যাণমন্ত্রীর পিএস সারোয়ার হোসেন; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রীর পিএস মো. আক্তারুজ্জামান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর পিএস মো. রেজাউল আলম ও শিল্প প্রতিমন্ত্রীর পিএস শাহ মোমিন। জাতীয় সংসদের স্পিকারের পিএস আবদুল মালেক, সংসদ উপনেতার পিএস মোহাম্মদ শাহজালাল, হুইপের পিএস মো. তোফাজ্জল হোসেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের পিএস আল মামুন ও বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যানের পিএস মোহাম্মদ গোলাম কিবরীয়াকে যুগ্ম সচিব করা হয়েছে। ১০ জন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুজন করে এবং ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের একজন করে রয়েছেন। (সূত্র: প্রথম আলো)
মশা ‘মারতে’ ৬০ কর্মকর্তার বিদেশ সফর
এর আগে সরকারি কর্মকর্তাদের ঘাস চাষ, খিচুরি রান্না শেখাসহ নানা প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ সফরে যাওয়ার প্রস্তাব যায় পরিকল্পনা কমিশনে। এমনকি সেই প্রস্তাব পাসও হয়। সেই ধারাবাহিতকায় এবার মশা নিধনে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় ৬০ কর্মকর্তার জন্য বিদেশ সফরের প্রস্তাব দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিডি)। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছ ১০ কোটি টাকা। ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর পলিসি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে গবেষণা করতে বিদেশে যাবেন এসব কর্মকর্তা।
এই কর্মকর্তাদের অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চায়না, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা ব্রাজিলে ভ্রমণে যাওয়া লাগতে পারে। ‘ইম্প্রুভমেন্ট অব আরবান পাবলিক হেলথ প্রিভেন্টিভ সার্ভিসেস’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে এলজিডি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে জানান, সম্প্রতি প্রকল্প প্রস্তাবটি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। সেখানে নানা বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- ২০টি পাবলিক টয়লেট খাতে খরচ ধরা হয়েছে ৫৮ কোটি টাকা। আর একটি ফগার মেশিন কিনতে ব্যয় সংস্থান করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। অথচ বাজারে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় ভালো মানের ফগার মেশিন পাওয়া যায়। পিইসি সভায় একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে প্রায় তিন কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু পাবলিক টয়লেট-ই নয়, এমন নানা ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। জনবহুল জায়গায় ওয়াটার পয়েন্ট স্থাপন, মশা মারার ফগার মেশিন কেনা বা ময়লা সরানোর ট্রলি কেনাসহ প্রকল্পটির অধিকাংশই কেনাকাটা নির্ভর। এক হাজার ২৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকার প্রকল্পে এক হাজার ৭৩ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। বাকি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০টি মোবাইল বা পাবলিক টয়লেট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ, একেকটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে খরচ হবে দুই কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অথচ দেশের সবচেয়ে বেশি টয়লেট নির্মাণ করা স্থানীয় সরকার বিভাগেরই আরেক প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (ডিপিএইচই) ২০ থেকে ২২ লাখ টাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করছে। ঢাকা শহরে সেই পাবলিক টয়লেট নির্মাণে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা লাগার কথা। সূত্র জানায়, প্রকল্পটিতে মশা মারার ধোঁয়া ছাড়ার ১০০টি ফগার মেশিন কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। অর্থাৎ, একেকটি ফগার মেশিনের দাম পড়বে পাঁচ লাখ টাকা করে। অথচ বাজারে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে এসব ফগার মেশিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে ময়লা সরানোর জন্য ৪০টি হুইল ব্যারো বা ময়লা স্থানান্তরের ট্রলি কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি ট্রলি কিনতে খরচ পড়ছে সাড়ে সাত লাখ টাকা। অথচ এসব ট্রলি অন্য প্রকল্পে মাত্র ২০ হাজার টাকায় কেনা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, বিদেশে প্রশিক্ষণ ছাড়াও প্রকল্প ঋণের অর্থায়নে স্থানীয় প্রশিক্ষণ বাবদ ৯৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে কোন বিষয়ে কত জনকে, কাদের কোন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তা জানানো হয়নি। দেশে মশা নির্মূল ও স্বাস্থ্যখাতের কাজ বছরের পর বছর ধরে চলে এলেও ঋণের অর্থায়নে ১৩ জন পরামর্শকের পেছনে ৩৯ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। (সূত্র: সারাবাংলা)