ত্রিপুরা নিউজ ডেস্ক: মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় বাংলাদেশ ছেড়ে ত্রিপুরা চলে আসা ৫ বাংলাদেশি নাগরিককে সুস্থ করে শুক্রবার আবার নিজের পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হল। দীর্ঘ বছর আগে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় বিভিন্ন সময় ঘুরতে ঘুরতে এসব বাংলাদেশি নাগরিক ত্রিপুরায় চলে আসেন। পরবর্তী সময়ে তাদেরকে বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করে আগরতলার নরসিংগড় এলাকার মর্ডান সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। সুস্থ হওয়ার পর তাঁরা জানান তাঁদের বাড়ি বাংলাদেশে।
পরবর্তী সময় আগরতলা বাংলাদেশের সরকারি হাই কমিশনের সঙ্গে কথা বললে তাদের ঠিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয় এবং ভারত সরকারের বিদেশ মন্ত্রকের অনুমতিক্রমে শুক্রবার এই সকল বাংলাদেশি নাগরিকদের নিজের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আগরতলা আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে এদিন তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এই সময়ে সীমান্তে দিকে তাদের পরিবারের সদস্যরা এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় অংশের দিকে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা বাংলাদেশ সরকারি হাই কমিশনের সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ, প্রথম সচিব রেজাউল হক চৌধুরী, প্রথম সচিব মো: এস এম আসাদ্দুজামান। সেইসঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আগরতলার নরসিংগড় এলাকার মর্ডান সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালের চিকিৎসক ডা উদয়ন মজুমদারসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা।
এদিন যে পাঁচজনকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাঁরা হলেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া এলাকা বাসিন্দা সন্তোষ দেব, নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার বাসিন্দা বিজয় চুনু, মানিকগঞ্জ জেলার পুরাদাহ এলাকার ময়না বেগম, পটুয়াখালী জেলার কোড়ালিয়া এলাকার রোজিনা বেগম এবং কুমিল্লা জেলার নাজিরপুর এলাকার বাসিন্দা কুলসুম বেগম। সীমান্তে উপস্থিত বাংলাদেশ সরকারি হাইকমিশনের আধিকারিকরা একজন একজন করে তাদেরকে পরিবারের হাতে তুলে দেন। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সদস্যদেরকে দেখতে পেয়ে তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, জড়িয়ে ধরেন একে অপরকে। প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ বলেন আজ খুব আনন্দের দিন কারণ দীর্ঘ বছর পর হারিয়ে যাওয়া সদস্যদেরকে তাদের পরিবারের হাতে তুলে দিতে পারছি। সেই সঙ্গে বলেন এদের বিভিন্ন সময় মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করেন এবং তাদেরকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
দীর্ঘদিন চিকিৎসা পরিষেবা পেয়ে তারা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেন এবং নাম ঠিকানা বলতে সক্ষম হন। পরবর্তী সময় খোঁজখবর নিয়ে দেখা হয় সেটা সঠিক কিনা এবং চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়ার প্রেক্ষিতে তাদের পরিবার- পরিজনের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে তাদেরকে সুস্থ করে তোলার জন্য তারা ত্রিপুরার সরকার, ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বাংলাদেশ সরকার এবং বেসরকারী সংস্থাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তাদের পরিবারকে খুঁজে বের করার জন্য।
এভাবে তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকার জন্য, কারণ যখনই যারা এভাবে অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় এখানে আসেন তাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে সুস্থ করা হচ্ছে এবং পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করা হচ্ছে। গত তিন বছরে সরকারি হাইকমিশনের উদ্যোগে এখন পর্যন্ত ১৫ জন বাংলাদেশি নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিন যে পাঁচজনকে বাড়িতে পাঠানো হলো তাদের মধ্যে দুজনকে ২০১৫ সালে পাওয়া গিয়েছিল এবং বাকি তিনজনকে ২০১৮ সালে পাওয়া গিয়েছিল। যাদের এদিন পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হল তাদেরকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্ধার করে আদালতের নির্দেশে এই হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল এবং পুরোপুরি সুস্থ নিশ্চিত হওয়ার পর বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মর্ডান সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালের চিকিৎসক ডা উদয়ন মজুমদারকে সঙ্গে তিনি জানান হাসপাতালে আরও ১৫ জনের মতো বাংলাদেশে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রাথমিক কথাবার্তায় তারা নিজেদেরকে বাংলাদেশি বলে দাবি করেছেন তবে চূড়ান্ত হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।