বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে যৌথবাহিনী। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এ দুই উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
সোমবার (১৭ অক্টোবর) রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি।
তিনি আরো জানান, পাহাড়ে থাকা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনী। এ সময় অনেকে বান্দরবানে ভ্রমণ করতে আসছেন। অনেক পর্যটক না জেনে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে যান। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে যৌথবাহিনীর অনুরোধে ওই দুই উপজেলায় ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, যৌথবাহিনীর অভিযান শেষ হলে ওই দুই উপজেলা আবার পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য খুলে দেয়া হবে। বান্দরবানের মাইক্রো জিপ মাহেন্দ্র মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাসিরুল আলম বলেন, নির্দেশনা পাওয়ার পর এ দুটি উপজেলায় পর্যটকবাহী গাড়ি যাতায়াত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ক্যাম্পে শিবির স্থাপন করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে জঙ্গিরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জঙ্গি। জঙ্গিদের নির্মূলে বান্দরবান পার্বত্য জেলার দুর্গম এলাকাগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনী।
রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, কেএনএফ, সন্তু লারমার একটি বাহিনী ও ইউপিডিএফসহ (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) আরো কিছু বাহিনী সীমান্তে রয়েছে। এরা সবসময় আমাদের সীমান্ত এলাকা অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, পার্বত্য এলাকার তিনটি জেলাতেই আমাদের সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি র্যাব ও রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী তারা সেখানে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আমাদের এলাকায় থাকতে দিচ্ছি না। যখনই বুঝতে পাচ্ছি তখনই সরিয়ে দিচ্ছি। আমরা ধারণা করছি যে জঙ্গিরা ওখানে গিয়েছিল তারা কেএনএফ এর ক্যাম্পের পাশাপাশি অবস্থান করছিল। আমরা তাদের কয়েকজনকে এনেছি, কয়েকজনকে শনাক্তও করেছি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুতে কেএনএফ নামে এক নতুন সশস্ত্র সংগঠনের নাম শোনা যায়। বান্দরবানের বম জাতিগোষ্ঠীর কিছু ব্যক্তি এটি গড়ে তুলেছেন বলে জানা যায়। কেএনএফ সংগঠনের নামে ফেসবুকে একটি পেজ খুলে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম—এই উপজেলাগুলো নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি করার পর তারা আলোচনায় আসে। তাদের দাবি, তারা বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি—এই ছয় জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে। নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশের ১৯টি জেলা থেকে ‘হিজরতের’ নামে ৫৫ জন তরুণ ঘর ছেড়েছেন বলে সম্প্রতি র্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়। ৫৫ জনের মধ্যে ৩৮ জনের পূর্ণ নাম-ঠিকানার একটা তালিকাও প্রকাশ করা হয়। ‘নিরুদ্দেশ’ বা ‘নিখোঁজ’ থাকা এই তরুণদের অনেকে বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় কেএনএফের ক্যাম্পে স্থাপন করা প্রশিক্ষণ শিবিরে আছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র জানায়, পাহাড়ে কেএনএফের ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেছে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া।
কেএনএফের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়গুলো আমরা দেখছি। যদি কানেকশন পাই, সেটা আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা ধারণা করছি যে জঙ্গিরা ওখানে গিয়েছিল। তারা কেএনএফের ক্যাম্পের পাশাপাশি অবস্থান করছিল।’