ত্রিপুরা নিউজ ডেস্ক: দীর্ঘবছর ধরে বেহাল রাস্তার কারণে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন এলাকার জনগণ। নাগরিক জীবনের মৌলিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত গ্রামের সাধারণ মানুষ। ঘটনা ধর্মনগর মহকুমার অন্তর্গত কদমতলা ব্লকের অধীন কুর্তি গ্রাম পঞ্চায়েতের চার এবং ছয় নম্বর ওয়ার্ডে।
এই গ্রামের মানুষ গ্রামীণ পাঁচশো মিটার রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন দীর্ঘ বছর ধরে। অভিযোগ তাদের দিকে গ্রামের প্রধান থেকে শুরু করে এলাকার বিধায়ক কেউই ফিরে তাকায়নি। বিজেপি পরিচালিত কুর্তি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুব্রত শব্দকর। পূর্বে ইসলাম উদ্দিন এই গ্রামের প্রধান ছিলেন, পরবর্তীতে কদমতলা পঞ্চায়েত সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
বর্তমানে কদমতলা কুর্তি বিধানসভার বাম বিধায়ক ইসলাম উদ্দিন, তিনি ২০১৮ সাল থেকে এই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিন্তু এলাকার মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি, তারা যেমন ছিলেন তেমনি আছেন। গ্রামের মানুষ জানিয়েছেন, দীর্ঘ বছর ধরে গ্রামের একটি বেহাল রাস্তার কারণে দুই ওয়ার্ডের প্রায় আড়াইশো মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ২০১৮ সাল থেকে এই এলাকার বিধায়ক ও গ্রামের প্রধানকে গ্রামের মানুষ এই রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসলেও প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই জোটেনি তাদের কপালে। তারা বিগত দিনে শুধু রাস্তা হবে হবে বলে মানুষকে আশ্বাস দিয়েছেন। গ্রামের মানুষের অভিযোগ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে বছরে একটি দিনের জন্য খোলা হয়না। এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পঞ্চায়েত চলছে।
শুধু এই রাস্তা নয় গ্রামের সকল রাস্তার একই অবস্থা। সুন্দর ভাবে হাঁটাচলা করার মতো কোন রাস্তাই নেই গ্রামে। এই বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেই গ্রাম পঞ্চায়েতের। গোপনে মিছিল মিটিং ছাড়া প্রধান সহ গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যরা কোন কাজ করেন না বলে অভিযোগ। রাস্তায় দেখা হলে এই রাস্তা সংস্কারের দাবি জানানো হলে তাদের একটাই বক্তব্য কিছুদিনের মধ্যে রাস্তা সংস্কার করে দেওয়া হবে। গ্রামের মানুষ প্রয়োজনীয় কাজে পঞ্চায়েত অফিসে গেলে পঞ্চায়েত বন্ধ থাকায় তারা কোন কাজ করাতে পারেননা। এই গ্রামে বসবাস করেন বিধায়ক ইসলাম উদ্দিন, দুই ওয়ার্ডে আছেন শাসক দলীয় পঞ্চায়েত সদস্যা জোবেদা খাতুন সহ অপর পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএম দলের তাজ উদ্দিন। গ্রামের এই রাস্তা সংস্কারে তাদের কোন উদ্যোগ নেই।
গ্রামের এক প্রবীণ নাগরিক জানিয়েছেন, বিগত একটানা পঁচিশ বছর বাম সরকার ছিল রাজ্যে। কিন্তু তাদের রাস্তা করে দেওয়া হয়নি। তবে সেই আমলে মাটির রাস্তায় ইট দিয়ে তাদের জন্য চলাফেরা করার উপযোগী তারা করে দিয়েছিলেন। বর্তমানে রাজ্যে বিজেপি সরকার চলছে। রাম আমলে এই রাস্তা নিয়ে বেশ কিছু মামলা মকদ্দমা হয়েছে। সেই সময় তিনি পুলিশকে বলেছিলেন, এই গ্রামীণ রাস্তা মেরামত করার জন্য পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে একটি বারের জন্য কোদাল লাগানো হয়নি। সেই কথা বলা নিয়ে বেশ কিছু ঝুট-ঝামেলা হয় তার সাথে। বর্তমানে এই রাস্তা বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষাঙ্গনে যেতে পারছেনা। ছোট ছোট স্কুল পড়ুয়াদের কাঁধে করে নিয়ে যেতে হচ্ছে পুনরায় তাদের নিয়ে আসতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে যখন ইসলাম উদ্দিন গ্রামে ফিরেছিলেন। তখন তিনি বিজয়ী বিধায়ককে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে চা পান দিয়ে আদর আপ্যায়ন করেছিলেন এবং একান্তে ডেকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন গ্রামের এই বেহাল রাস্তা সংস্কার করে দেওয়ার জন্য। সেই সময় বিধায়ক কথা দিয়েছিলেন এই রাস্তা তিনি সংস্কার করে দেবেন। কিন্তু ছয় বছর অতিক্রান্ত হলেও সেই রাস্তা আজও সংস্কার করা হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন বর্তমানে গ্রাম পঞ্চায়েতের কঙ্কালসার অবস্থা। গ্রামের মানুষ রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের কিভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে সেই চিন্তা গ্রামের নির্বাচিত সদস্যরা করেন না। ভালো কাজের কোন উদ্যোগ নেই তাদের মধ্যে। গ্রামবাসীরা সকলেই দ্রুত এই রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
তাছাড়া পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে গ্রামে। এলাকাবাসীরা হুশিয়ারি দিয়েছেন পঞ্চায়েত নির্বাচনের পূর্বে এই রাস্তা সংস্কার না করা হলে ভোট বয়কটের ডাক দিতে তারা বাধ্য হবেন।