ঘন্টাধ্বনি পতনের
ভুল গাছ বেয়ে তুমি উঠতে চাইছো লতা
প্রকৃতি নিশ্চিত জানে পরিণাম
সেজন্যেই নিরাসক্তি
আঁকড়ে ধরে আছো নীরবতা
কবিতাও এরকম ভুল পথে যাবে ?
রিমান্ডের নির্যাতন সইতে সইতে
একসময় সংজ্ঞাও হারাবে ?
চরাচর জানে না এ প্রশ্নের উত্তর
জানতে চাইলে অদৃশ্য সে অক্টোপাস
আষ্টেপৃষ্ঠে বিষাক্ত লালায়
অনন্তর বিলুপ্তির সুরভি ছড়ায়
পতনের ঘন্টাধ্বনি
ওই শোনা যায়
খাদে কিনারায়
সত্য হয়ে উঠতে থাকে দুর্ধর্ষ পতন
লতাগুল্ম তৃণ বৃক্ষ সাক্ষী থাকলো
অনিচ্ছায় দিলো তারা
যাবতীয় স্বস্তি বিসর্জন!
বৃথা এ মন্থন
রোদনে ক্ষরণে
কেটে গেল একটি জীবন।
দীর্ঘ নয়, তাও কেন দীর্ঘ মনে হয়?
এ প্রশ্নের উত্তর কখনো হয়তো
পেয়ে যাবো, অবসিত হবে সে সংশয়–
এ জীবন কুঁকড়ে থাকে
সর্বত্র জড়ানো আছে সক্রিয় সে মৃত্যুভয়
ধ্যানে নিরজনে
চেষ্টা চলে মরণের অতিক্রমণের
দুঃসাধ্য দুর্গম সেই আকুলতা, জয়।
আহা রে জীবন
মোক্ষ পেতে চাইছো তুমি–
টুকরো ছিন্ন হতে কতক্ষণ ?
অনিবার্য জেনো পরাজয়!
জীবন তো নদী নয়–
আছে তার অনিচ্ছুক অনিবার্য ক্ষয়
এ-ই হলো বাস্তবতা, সত্যের দর্শন
সুতরাং জেগে থাকা
অবাস্তব বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা-
বৃথা ছল অন্ধ মায়া, ব্যর্থ সে ক্রন্দন!
‘মিটিল না সাধ
ভালোবাসিয়া তোমায়…’
একবার হারিয়েই দ্যাখো
বহুবার ফিরে ফিরে পাবে
অচল পয়সা নই
কী রতন চিনতে পারো নি,
হারাতে সম্মত নও
জীবন যক্ষের ধন,
যত বেশি আগলে রাখতে চাও,
মৃত্যু ততো কাছে এসে যাবে
ঠেকানোর কেউ নাই।
নালিশ করারও যোগ্য কেউ নাই।
শুধু বন্ধ্যা চরাচর, রুগ্ন দীর্ঘশ্বাস
বেদনা গরলে ভরা এই পরবাস
ভালোবেসে মিটিল না আশ।।
জোড়া পংক্তি ভাঙাচোরা
১.
ভাঙতে ভাঙতে গড়ছি তোমায় ভাঙাগড়ার খেলায়,
ক্লান্তি এসে ভর করেছে পড়ন্ত এই বেলায়।
২.
স্বপ্নে তোমার সঙ্গে দেখা, হারিয়ে ফেলি ফের,
এই অদেখার গুনছি মাশুল ভালোবাসার জের
৩.
না পাওয়া সুখ তোমায় কেন ঈর্ষা করি বলো
তোমার চোখের গভীর কোণে কান্না টলোমলো
৪.
বলছি নিবিড় গল্প নদীর, স্রোতবিহনে নিঃসঙ্গ যে একা
বুক চেরে তার মরুর বালি, শূন্যতা দেয় দেখা
৫.
ভালোবাসায় ভাসতে ভাসতে ডুবছি মরণ গাঙে
কেমন করে ফিরবো কুলায়, যে নীড় ঝড়ে ভাঙে…
৬.
অনেক হলো অপেক্ষাতাপ, রইলো মোকাম দূর
নিষ্ফলা ছাই হৃদয়ভূমে বিচ্ছেদে ভরপুর।
৭.
অঙ্গুরীয় একলা তুমি, কোথায় কবে হারিয়ে গেছে জোড়
দূর দিগন্তে লীন হয়েছে সেই সে দোলা মুগ্ধ মনোচোর।
৮.
দুঃখ যদি বৃষ্টি হতো, ঝরতে ঝরতে ঠিক ফুরিয়ে যেত
ফুরোতে সে ভুলেই গেছে, ফুরোলে কী এতটা সুখ পেত?
৯.
হয়েছি কাঙাল নিঃস্ব ভালোবেসে দীর্ণ দেউলিয়া
তারপরও ভাঙতে পুড়তে শ্রান্তি নাই মুমূর্ষু মরিয়া
১০.
মন কিন্তু পেয়ে যায় অন্য প্রান্তে ভাঙাচোরা মনের খবর
বিরোধিতা তীব্র খুবই তাতেও বিরত নয় প্রেমিকপ্রবর।
১১.
পুড়তে পুড়তে এতোটা পথ, থাকছে কিছু বাকি?
কখন কবে উড়াল দেবে খাঁচায় আটক পাখি!
১২.
আঘাতে আঘাতে দীর্ণ করতে চাই যাতে মনে রাখো
দেখি তো কতটা সাধ্য এ আমাকে ভুলে তুমি থাকো
১৩.
ভালোবাসা অন্ধঋণ শুধতে শুধতে জীবনই ফুরায়
তারপরও তৃষ্ণা জেগে, কিছুতে না পরান জুড়ায়
১৪.
রুমাল হারিয়ে যায় সুগন্ধির স্মৃতিরেশ থেকে যায় বুকে
এলোমেলো নিঃস্ব ও কাঙাল করে ইচ্ছামৃত্যু সুখে।
আঁধারের মুখোমুখি
ভাঙতে ভাঙতে এতোদূর চলে আসা
এখন সময় যাচ্ছে অনিশ্চিত অপেক্ষায়
জোয়ার কখন আসে, কখন যে চাঁদের উদয়
কবিতার সঞ্জীবনী সুধা এই মননে মেখেছি
ভাটা আর উদ্বেগের হেতু নয়, আতঙ্ক-অধ্যায়
পেরিয়ে এসেছি কবে ওই সব সামান্যতা
মনোমধ্যে চিহ্নছাপ আলোড়ন কিছুই তোলে না
গোধূলি আগতপ্রায়। সন্ধ্যা নামবে হুলুস্থুল
সাম্রাজ্য বিস্তারে ওর কার্পণ্য হবে না কিছু,
আঁধার নিঝুম নয়,স্বভাব নিরীহ নয় কিছুমাত্র
দৌরাত্ম্য সে ভালোমত আয়ত্ত করেছে জেনো,এই তথ্য
সকলের বোধে ও গোচরে নেই, দৃশ্যমানও নেই
আঁধার আসলে এক আততায়ী লক্ষ্যে বড়ো অবিচল
আঁধার কখনো কিন্তু স্রোতোবাহী নয়, বন্ধ্যা বালুচর
এবার নিঃশব্দে হবে মোকাবেলা, শুরু হবে অনন্ত ক্ষরণ।
সংস্থিত সংলগ্না থেকো
কবিতার যাত্রাপথ,দীর্ঘ তো হবেই।
কারণ কবিতা হচ্ছে প্রগতির ফুল।
কাঁটা তাকে ঘিরে রাখবে স্বাভাবিক
এ নিয়ে বিতর্ক নাই কিছু।
কবিতা আদিম শিল্প। স্নায়ু মজ্জা ঘাম
মননের সূক্ষ্ণ রক্তরস
আত্মায় অলক্ষ্যে মেখে বড়ো পুষ্ট হয়
ঋদ্ধি ওম খুঁজে পেতে নেয়
নিজগুণে নিভৃতি ও তরিকায়
এ নিয়ম স্বতঃস্ফূর্ত প্রাকৃতিক–
কেউ তার স্বাচ্ছন্দিক গতিপথ ঢেউ
আবেগ অহং দ্যুতি
কাঠিন্য ও কোমলতা
স্পর্শ করতে কখনো সক্ষম নয়,
এ সত্যের বিরোধিতা করা
সমীচীন বাঞ্ছনীয় নয়।
কবিতা প্রকৃতি মিশে কী সুন্দর একাকার
দু’জনাই স্বপ্নভুক
উভয়েই ছন্দায়িত
ভিতরসত্তায় পোষে
একইসঙ্গে দৃঢ়তা নম্রতা
আমরা সেই ‘কঠিনেরে ভালোবাসিলাম’
অতএব লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার
লেশমাত্র আশঙ্কা তো নাই।
কবিতা দয়িতা ওগো চলে এসো
লক্ষীমন্ত আরাধ্যা ‘মিউজ’
এসো আমরা দোঁহে মিলে বিনির্মাণ করি
উচ্ছলিত স্বপ্নসাঁকো
মানুষের সঙ্গে মানুষের
প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের
প্রযুক্তির সঙ্গে প্রগতির
জীবনের সঙ্গে মরণের,
এসো দ্রুত,সময় গড়িয়ে যায়,হরি, বেলা যায়
সাধনভজন কিছু ইতোমধ্যে হয় নাই
না বুঝেই ভবগাঙে ভাসিয়েছি নাও
সেই নৌকো টালুমালু ফুটোয় জর্জর
সেঁউতি কোথায় আছে
হাতড়িয়ে পাই না বেদিশ
বড়ো সাধ স্বপ্নসহ নিমজ্জিত হবো
এরকম আঁধারিয়া ঘনঘোর
নৌকাডুবি হলে কী উপায় বলো
কে ঠেকাবে এমন পতন? সাধ্য আছে কার?
ডুবে যাওয়া কপালে লিখিত আছে
কবিতা গো আমার সঙ্গেই তুমি বেঁধো গাঁটছড়া
তাহলে আমার কোনো আফসোস দুঃখতাপ নাই…
ইচ্ছে করো যদি
ভালোবাসা ভালো আছো? ডেকেছি তোমায়,
ভ্রূকুঞ্চিত বিরহ নিপাত যাক,ঠেলে দিচ্ছি
আমরা তাকে অগম্য কোমায়।
ভালোবাসা তুমি শক্তি,একমাত্র ভরসা ও আশা
তোমারই ক্ষমার মাঝে অক্সিজেন ও পরমা
বাঁধি স্বপ্ন, খেলাঘর, একটুকু বাসা।
ভালোবাসা তুমি রশ্মি,জোছনার মৃদুমন্দ আলতো শিহরণ
তুমি-গাঙে ভাসাই আবেগ-নাও
পালে হাওয়া দাও পাগলা মন।
ভালোবাসা,মানুষকে বলো হতে প্রকৃত মানুষ
হানাহানি রক্তপাত হিংসা ও ক্ষুদ্রতা
ভুলে তারা ফিরে পাক স্বাভাবিক হুঁশ।
ভালোবাসা ও বন্ধু প্রীতম তুমি অভাজনে সাহচর্য দিয়ো
ভুলেও কোরো না ত্যাগ, তাচ্ছিল্য ও অবহেলা
ইচ্ছে করলে আমার মনন-রস কণ্ঠে শুষে নিয়ো।
মানুষেরা নদী নয়
নদীর জন্মের সঙ্গে মনুষ্যজন্মের মিলঝিল কিছু হয়তো আছে।
কিংবা ছিল আদিকালে,আজকাল ব্যাকরণ সংহিতা নিয়ম বুঝি
বদলে টদলে গেছে। বিবর্তিত হয়ে গেছে,অমোঘ সে, সুতরাং
বিচ্যুতিও লক্ষ করি বেদনাসমেত। চোরা কোনো দীর্ঘশ্বাস বয়,
দৃশ্যত বোঝে না কেউ, রিখটার স্কেলে সেই দীর্ঘশ্বাস কম্পনের
মাত্রা গতি ব্যাপকতা কিছুই পড়ে না ধরা,পড়বার বন্দোবস্ত নাই।
নদীর স্বভাব জানি স্রোতে সে বিলিয়ে দেয় নিজেকে উজাড় করে,
পলিও সে বিতরণ করে যাচ্ছে নিরঙ্কুশ,এরকমই চারিত্র্য স্বভাব।
মানুষ তেমন নয়, নিজেদের মধ্যে তারা সুনিপুণ জিইয়ে কেন রাখে
বিদ্বেষের চোরাবিষ, ঈর্ষা ও জ্বলুনি ক্রোধ মিশে যায় রক্তসঞ্চালনে
নদীর মতন খোলা উদ্দাম সংস্কারহীন মানুষেরা হতেই পারে না!