ত্রিপুরা নিউজ ডেস্ক: নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে তাদের আন্দোলন কর্মসূচী তেজি করছে। প্রায় প্রতিদিনই নানা ইস্যুতে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। এর প্রেক্ষিতে বুধবার ত্রিপুরা রাজ্যের তপশীলি জাতির সার্বিক উন্নয়ন সংক্রান্ত ১৫দফা দাবীকে সামনে রেখে ডেপুটেশন দিল। রাজ্যের ২৩টি মহকুমার মহকুমা শাসকের নিকট ডেপুটেশন দেয় তারা।
আগরতলার বনমালীপুর এলাকার প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের ক্যাম্প অফিস থেকে দলের আহ্বায়ক সুবল ভৌমিকের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহর পরিক্রমা করে আগরতলা অফিস লেনস্থিত সদর সাব ডিভিশন ম্যাজিস্ট্রেটে অফিসে এসে শেষ হয় এবং এস ডি এম অফিসে ডেপুটেশন প্রদান করেন।
তাদের দাবিগুলো হলো, তপশীলি জাতির প্রকৃত জনসংখ্যা নিরূপণ করতে হবে এবং ত্রিপুরা রাজ্যে তপঃশীল জাতির জন্য লোকসভার একটি আসন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রকৃত তপঃশীল জাতি সম্প্রদায়ের লোকদের এস.সি. সার্টিফিকেট প্রদানের ক্ষেত্রে অযথা বিড়ম্বনা বন্ধ করতে হবে। ভুয়া তপঃশীল জাতি সার্টিফিকেট বাতিল ও দোষীদের শাস্তিদানের পাশাপাশি ভুয়া সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে চাকুরী প্রাপ্তদের চাকুরিচ্যুত করতে হবে।
ভুয়া তপশীল জাতি সার্টিফিকেট প্রদান বন্ধ করতে রাজ্যের প্রতিটি ব্লকের এস.সি. সাব-কমিটিগুলিতে সর্বদলীয় প্রতিনিধি রাখতে হবে। প্রতিটি মহকুমা, জেলা ও তপঃশীল জাতি অধিকর্তাসহ তপঃশীল জাতি সার্টিফিকেট তদন্তকারী অফিসারকে অবশ্যই তপঃশীল জাতিভুক্ত সম্প্রদায়ের লোক হতে হবে। বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে (স্পেশাল ড্রাইভ) ত্রিপুরা সরকারের দপ্তর সমূহ সহ সমস্ত অধিগৃহীত সংস্থায় তপঃশীল জাতির জন্য ব্যাকলগসহ সকল সংরক্ষিত শূন্যপদগুলি ১০০ পয়েন্ট রোস্টার মেনে নিয়োগ ও পদোন্নতির মাধ্যমে অবিলম্বে পুরণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং কোন পদই অসংরক্ষিত করা যাবে না।
বেকারদের চাকুরি প্রদানে অনিয়ম এবং কেলেঙ্কারীর সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। যোগ্য তপ:শীলি বেকারদের চাকুরিতে নিয়োগ করতে হবে।উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তপ:শীলি জাতির কর্মচারীদের বঞ্চনা ও বদলি করা চলবে না এবং প্রতিটি সরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠানে আনুপাতিক হারে তপ:শীল জাতির কর্মচারি রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। স্টাইপেন্ড ও বুঝগ্র্যান্ট বৃদ্ধি করে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দুই মাসের মধ্যে তপ:শীল জাতির ছাত্র ছাত্রীদের নিয়মিত প্রদান করতে হবে এবং উচ্চ শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে সহজ শর্তে, অল্প সুদে ঋণদানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তপশীলি জাতি ছাত্র-ছাত্রী নিবাসগুলির সংস্কার ও থাকার সুব্যবস্থা করা এবং আসন সংখ্যা বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে স্টাইপেন্ডের হার বৃদ্ধি করা।
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প অনুসরণ করে রাজ্যের তপ:শীল জাতির দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী প্রতিটি পরিবারকে দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে দ্রুত বি.পি.এল. কার্ড প্রদান করতে হবে। রাজ্যের গরীব ভূমিহীন তপ:শীল জাতির পরিবারগুলোকে বসবাসযোগ্যস্থানে ভূমি বন্দোবস্ত দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা” ও অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী প্রতিটি তপ:শীল জাতির পরিবারের জন্য বাসগৃহের ব্যবস্থা করতে হবে।
তপ:শীলজাতির কৃষকদের বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করতে হবে। তপ:শীল জাতিভুক্ত মৎস্যজীবী, সভাসুন্দর, চর্মকার, বাদ্যকর এবং হরিজন সম্প্রদায়ের জনগণের পেশাভিত্তিক কাজের জন্য যন্ত্রপাতি ও পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করতে হবে। রাজ্যের বিভিন্ন পঞ্চায়েত, নগর পঞ্চায়েত, পৌরপরিষদ, ভিলেজ কাউন্সিল এবং আগরতলা পৌর এলাকায় রাজারশেড ও সুপার মার্কেটগুলোতে তপ:শীল জাতিভুক্ত সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পেশায় যুক্ত ব্যক্তিদের ব্যবসা করার সুবিধার্তে বিনামূল্যে সংরক্ষণ মেনে ভিটি বন্টনের ব্যবস্থা করতে হবে। এস.সি. ওয়েলফেয়ার দপ্তরের বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত তপ:শীলি জাতি উন্নয়নের যথার্থভাবে ব্যয় করার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং বাজেটের ১৭% বরাদ্দকৃত অর্থ অন্যখাতে ব্যয় করা যাবে না।
ব্লক, মহকুমা এবং জেলাস্তরের তপ:শীল জাতি কল্যাণ দপ্তরের পৃথক বিভাগ স্থাপন করতে হবে। রাজ্যে তপ:শীলি জাতি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা সমূহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, রাস্তা, পাণীয় জল সরবরাহ সহ অত্যাবশকীয় পরিসেবার ব্যবস্থাসমূহ দ্রুত রূপায়নের উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। তপশীল জাতি লোকদের জন্য ৮টি জেলা সদরে ১টি করে রেস্ট হাউস নির্মাণ করতে হবে।ব্যাঙ্ক এস.সি. কর্পোরেশান সহ সরকারী স্বীকৃত অর্থ লগ্নীকারী সংস্থাগুলি থেকে প্রাপ্ত ঋণ যে সকল তপশীল জাতির দরিদ্র অংশের মানুষ তীব্র অভাব অনটনের জন্য পরিশোধ করতে পারেনি তাদের উক্ত ঋণ মকুবের জন্য ত্রিপুরা সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পুনরায় সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
রাজ্যে প্রতিনিয়ত খুন, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, নিরীহ মানুষের উপর অত্যাচার, জুলুম এবং কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পগুলি বন্টনে বৈষম্য, দলবাজি ইত্যাদি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
তপশীল জাতিভুক্ত মহিলাদের স্ব-শক্তি করণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রোজদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসের উপর অনবরত করের বোঝা চাপানো এবং মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে হবে।