শিরোনাম
শুক্র. ডিসে ৫, ২০২৫

ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা ঘিরে দেশে রমরমা অনলাইন জুয়া

আন্তর্জাতিক বা দেশীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট, ফুটবল বা অন্যান্য খেলা ঘিরে চলছে রমরমা অনলাইন জুয়া। এসব খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় সরাসরি ওয়েবসাইট বা অ্যাপসের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে অনলাইন জুয়া খেলার আয়োজন করা হচ্ছে। ওয়ান এক্স বেট, বেট উইনার, পারিম্যাচ, বেট৩৬৫, লাইন বেট, মেলবেট, ২২বেট, পিন আপ সব থেকে জনপ্রিয় অনলাইন সাইট।

সাম্প্রতিক অনলাইন জুয়ার একেকটি অ্যাপসে মাসে কোটি টাকার বেশি জুয়া খেলা হচ্ছে। আর জুয়ার টাকার লেনদেন হচ্ছে ই-মানি ও হুন্ডির মাধ্যমে। রাশিয়া, ফিলিপাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা জুয়ার সাইট নিয়ন্ত্রকদের কাছে যাচ্ছে এসব টাকা। আর বাংলাদেশে থাকা এজেন্টরা পাচ্ছে কমিশন। একেক জন এজেন্ট মাসে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কমিশন পাচ্ছে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারের সাইবার ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত সোমবার রাজধানীর তেজঁগাও, বংশাল, লালবাগ ও মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেট উইনার অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারী এক চক্রে চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তারা হলেন, মো. আরিফুল ইসলাম (২৫), মো. আনোয়ার হোসেন (৩২), মো. হারুন অর রশিদ (৩৭) ও ইমরান হোসাইন (২৯)। তাদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।

সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই বেট উইনার সাইটের মাধ্যমে মাসে কোটি কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে সুপার অ্যাডমিন কিংবা মাস্টার অ্যাডমিন নামে রাশিয়া থেকে ওয়েবসাইটটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন দেশে দেখভালের জন্য ম্যানেজার নিয়োগ করা হয়। ম্যানেজার বাংলাদেশে জুয়ার এজেন্ট হিসাবে বিশ্বস্তদের নিয়োগ দেয়। গ্রেপ্তারকৃত চারজনই অনলাইন জুয়ার বাংলাদেশি এজেন্ট।

সিআইডি বলছে, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় যে সকল ক্রিকেট, ফুটবল বা অন্যান্য খেলা অনুষ্ঠিত হয় সেগুলো টাকার মাধ্যমে আগে থেকেই জয় পরাজয় ইত্যাদি সম্পর্কে বাজি ধরা হয়। এই বাজি খেলার জন্য একজন জুয়াড়ি মোবাইল নম্বর/ ই-মেইল এর মাধ্যমে এই বেটিং সাইটে বা অ্যাপসে অ্যাকাউন্ট ওপেন করলে অ্যাকাউন্টের বিপরীতে একটি ই-ওয়ালেট তৈরি হয়। শুরুতে এই ব্যালেন্স শূন্য থাকে। এই ওয়ালেটে ব্যালেন্স যোগ করার জন্য অনেক মাধ্যম রয়েছে যার ভেতর বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায় এবং বিভিন্ন ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি অন্যতম। এগুলোর যে কোনো একটি বেছে নিলে সেখানে বিকাশ, রকেট, নগদ এবং উপায় এজেন্ট নম্বরগুলোর মধ্যে যে কোনো একটি এজেন্ট নম্বর দেখায় অথবা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেনের অপশন দেখায়। এখানে ন্যূনতম ৫০০ টাকা ক্যাশ আউট করলে কিছুক্ষণের মধ্যে ই-ওয়ালেট এ ব্যালেন্স যুক্ত হয়ে যায়। এ টাকা/ব্যালেন্স দিয়ে সে পরবর্তীতে জুয়া খেলতে পারে।

এছাড়া ওই ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত এমএফএস এজেন্ট নম্বর প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হয়। বিভিন্ন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের এজেন্টরা জমাকৃত টাকা বাইন্যান্স নামক মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাপের মাধ্যমে ডলারে কনভার্ট করে জুয়ার সাইট পরিচালনাকারী বাইন্যান্স এর নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে এবং বাকি অংশ উইথড্র করে অ্যাপস পরিচালনাকারীদের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয়। ফলে বাইন্যান্স এর মাধ্যমে এই টাকা বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

অভিযান সংশ্লিষ্ট সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, জুয়াড় এজেন্টরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে এখন টাকা লেনদেনের জন্য মাঝখানে একটা লেয়ার তৈরি করেছে। এজন্য তারা সরাসরি নিজেরা এজন্টে সিম ব্যবহার না করে কিছু অসাধু এমএফএস (মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস) এজেন্ট দোকানদারকে টাকা লেনদেনের দায়িত্ব দেয়। কিছু স্টাফের মাধ্যমে ১৪-১৫ টি এজেন্ট সিম ব্যবহার করে চক্রটি ঢাকার তেজগাঁও, পুরান ঢাকা এলাকা ও মিরপুর এলাকায় অবস্থান করে এই জুয়াড় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

সম্রাট এবং শাহীন রেজা নামক দুইজন বেট উইনারের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে এ ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের মাধ্যমে এই সমস্ত জুয়াড় এজেন্টরা ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত এমএফএস (এজেন্ট সিম) ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশ থেকে জুয়াড়িদের টাকা সংগ্রহ করে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কনভার্ট করে বিদেশে পাঠিয়ে দেয় এবং তারা বেট উইনার ছাড়াও বেট ভিসা নামক আরেকটি জুয়ার সাইটেরও লেনদেন করে থাকে।

প্রতিমাসে একজন জুয়ার এজেন্ট বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন করে। কমিশন বাবদ টাকার একটা অংশ তারা পায়।

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার সাইবার ইন্টেলিজেন্স এন্ড বিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. আল ইমাম (পল্টন মডেল থানায় হওয়া মামলার বাদি) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেহেরপুর কেন্দ্রীক একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনলাইন জুয়াড় বিস্তার ঘটছে বাংলাদেশে। এজেন্টরা মোটা অঙ্কের টাকা কমিশন পাচ্ছে। পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তারকৃতরা গত দেড় বছরে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *