ত্রিপুরা নিউজ ডেস্ক: টিএসআর-এ প্রথমবারের মতো ১৩৭ জন মহিলা জওয়ানদের নিয়োগ করা হয়েছে। আজ নরসিংগড়স্থিত কেটিডিএস পুলিশ ট্রেনিং একাডেমীতে ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসের ১৪ ও ১৫ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের পাসিং আউট প্যারেড অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডাঃ) মানিক সাহা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস (টিএসআর) রাজ্যের গর্ব। দেশের অন্যান্য পুলিশ বাহিনীর তুলনায় রাজ্যের টিএসআর বাহিনী কোনও অংশে কম নয়। ফলে সারা দেশেই এই বাহিনীর একটা সুনাম রয়েছে। রাজ্যে বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ মোকাবিলায় টিএসআর দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। যা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামে প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে টিএসআর ক্যাম্পগুলো দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তাঁর কথায়, রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামে প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে টিএসআর ক্যাম্পগুলো দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় টিএসআর ক্যাম্পের উদ্যোগে সিভিক একশান কর্মসূচি, স্বাস্থ্য শিবির এবং প্রশাসনিক শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূখী প্রকল্প সম্পর্কে প্রত্যন্ত এলাকায় টিএসআর জওয়ানরা জনগণকে সচেতন করছেন এবং প্রকল্পের সুবিধা পেতে উৎসাহিত করছেন। গত দুই বছরে টিএসআর এবং পুলিশ বাহিনী সন্ত্রাসবাদীদের মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাদের তৎপরতার কারণে ইতিমধ্যেই ২৪ জন সন্ত্রাসবাদী ও তাদের সহযোগী আত্মসমর্পন করেছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, টিএসআর-এ ১৪ ও ১৫ নম্বর ব্যাটেলিয়ানে মোট ১৪১৩ জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল। এরমধ্যে মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষণে রাজা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টিএসআর-এ প্রথমবারের মতো ১৩৭ জন মহিলা জওয়ানদের নিয়োগ করা হয়েছে। মোট চারটি ট্রেনিং সেন্টারে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
এরমধ্যে নরসিংগড়ের কেটিডিএস পুলিশ ট্রেনিং একাডেমীতে ১৯৪ জন পুরুষ এবং ১৩৭ জন মহিলা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, আরকেনগর টিএসআর ট্রেনিং সেন্টারে ৪৬০ জন পুরুষ জওয়ানদের প্রশিক্ষণ হয়েছে, কচুছড়ায় কাউন্টার ইনসারজেন্সি এবং অ্যান্টি টেরোরিষ্ট স্কুলে ৩৯১ জনের এবং জম্পুইজলাস্থিত টিএসআর-এর ৭ম ব্যাটেলিয়ানের সদর দপ্তরে ২৩১ জন পুরুষ জওয়ানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১৪ ও ১৫ নম্বর টিএসআর ব্যাটেলিয়ানে নিযুক্ত ১৪১৩ জন জওয়ানদের মধ্যে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ৩৩১ জন জওয়ানের আজ এই ট্রেনিং একাডেমী থেকে পাস আউট শুরু হয়েছে। অন্যান্য ট্রেনিং সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের শীঘ্রই পাস আউটের ব্যবস্থা করা হবে। ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আইআর ব্যাটেলিয়ানের জন্য নির্ধারিত পাঠ্যক্রম অনুসারে টিএসআর নিযুক্তিদের পুঙ্খানুভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
আজকের পাস আউট মহিলা টিএসআর জওয়ানদের পরবর্তী সময়ে অপারেশন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও মহিলাদের উপর অপরাধ ইত্যাদি বিষয়ের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) মানিক সাহা বলেন, রাজ্যে ১৯৮৪ সালে ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস (টিএসআর)-এর যাত্রা শুরু হয়। তৎকালীন সময়ে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর স্বল্পতা থাকার কারণে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ধাঁচে টিএসআর বাহিনী গড়ে তোলা হয়। টিএসআর এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে “ধীরতা ও বন্ধুত্ব”। ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে টিএসআর-এর দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়ান গড়ে তোলা হয়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে প্রায় ৮৫৬ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে। সন্ত্রাস কবলিত রাজ্যের দীর্ঘ সীমান্ত এলাকায় মূলত টিএসআর বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছিল। টিএসআর এর পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় টিএসআর জওয়ানদের দ্বারা দ্বিতীয় পর্যায়ে নিরাপত্তা বলয় তৈরী করা হয়েছিল। সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ মোকাবেলায় টিএসআর জওয়ানদের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। ২০১১ সালে ত্রিপুরা পুলিশ এবং টিএসআর বাহিনী উল্লেখযোগ্য কাজের স্বীকৃতি হিসাবে ‘প্রেসিডেন্টস কালার মেডেল’-এ সম্মানিত হয়েছিল। সারা দেশের মধ্যে চতুর্থ রাজ্য হিসেবে ত্রিপুরা এই প্রেসিডেন্টস কালার মেডেল-এ সম্মানিত হয়। এছাড়াও ‘প্রাইড অব ত্রিপুরা’ হিসাবে টিএসআর বাহিনী রাজ্যে নিজেদের স্বতন্ত্রতা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ মোকাবিলা ছাড়াও বর্তমানে টিএসআর বাহিনী রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা, শিল্প নিরাপত্তা, ভিআইপি নিরাপত্তা এবং নেশা বিরোধী অভিযানের সঙ্গেও যুক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করছে। এনডিআরএফ-এর ট্রেনিং সেন্টারে বিপর্যয় মোকাবিলা এবং আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে সিআরপিএফ-এর র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স-এর ট্রেনিং সেন্টারে টিএসআর জওয়ানরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বর্তমানে টিএসআর-এর এক ব্যাটেলিয়ান ওএনজিসি-তে এবং এক কোম্পানী ওটিপিসি-তে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও রাজ্যের শিল্প এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে টিএনজিসিএল এবং নীপকো-তে টিএসআর বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চাহিদা অনুসারে দিল্লীতে পার্লামেন্ট স্ট্রিট, আদালত চত্ত্বর, বিভিন্ন দূতাবাস এলাকায় দিল্লী পুলিশের সাথে টিএসআর জওয়ানরা নিয়োজিত রয়েছেন এবং দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনের সময়ে টিএসআর বাহিনীকে নিযুক্ত করা হচ্ছে এবং তাদের দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের ফলে রাজ্যের সুনাম অর্জিত হচ্ছে। পরিস্থিতির আরো সার্বিক উন্নতির।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শহর এলাকার আইন শৃঙ্খলা লক্ষ্যে টিএসআর জওয়ানদের শহর এলাকায় নিয়োজিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এছাড়াও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালনের জন্য আগরতলা, উদয়পুর, ধর্মনগর, আমবাসা, কুমারঘাট এবং বিলোনীয়ায় টিএসআর।