সমরেশ বৈদ্য, চট্টগ্রাম: পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর তিন দিনব্যাপী উৎসবের শুরু হয়েছে। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার থেকে রাঙ্গামাটিতে শুরু হয়েছে চাকমাদের বিজু, মারমাদের সাংগ্রাই ও ত্রিপুরাদের বৈসুক উৎসব। সকাল থেকে উপজাতীয় নারীরা বাগান থেকে ফুল তুলে নিয়ে একে একে চলে আসে কাপ্তাই হ্রদের নৌ ঘাটে। ভগবানের আর্শীবাদ প্রার্থনা করে কাপ্তাই হ্রদে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে জলে ফুল ভাসিয়ে উৎসবের সূচনা করেন।
রাঙ্গামাটি রাজবাড়ী ঘাটে বৈসাসী উদযাপন কমিটির উদ্যোগে গ্রামের তরুণ তরুণীরা ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে তিন দিন উৎসবের সূচনা করা হয়। সকালে গর্জনতলীতে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্য ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে ত্রিপুরাদের বৈসুক উৎসবের উদ্বোধন করেন রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী। এসময় জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অন্য রাজবাড়ী ঘাটে বৈসাবি উৎদযাপন কমিটির উদ্যোগে ফুল বিজুর উদ্বোধন করেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এ সময় সাবেক উপসচিব প্রকৃত রঞ্জন চাকমা, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমিন এ সময় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থত ছিলেন। উৎসবে আগত অন্য সম্প্রদায়ের লোকজন বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের সামাজিক উৎসব বৈসাবি যেন সকল সম্প্রদায়ের উৎসব এখানে এসে মনে হচ্ছে না আমরা বাঙ্গালী। আমাদের মনে হচ্ছে আমরাও এদের একজন।
রাঙ্গামাটি থেকে সাংবাদিক নন্দন দেবনাথ জানিয়েছেন, উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি চাকমা বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর উৎসব না করলেও রাঙ্গামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় এবছর উৎসবের উচ্ছ্বাস বয়ে যাচ্ছে। এই ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়েই শুরু হচ্ছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোর তিন দিনব্যাপী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু। বুধবার গোজ্যেপোজ্যে দিন পালিত হবে যার যার ঘরে।রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, এতো রং এতো বৈচিত্র দেখে আমি মুগ্ধ। গত দুই বছর করোনার কারণে পাহাড়ের বৈসাবী উৎসবের রংছড়াতে পারেনি। কিন্তু এবছর করোনা কিছু মুক্ত হওয়ায় পাহাড়ের তার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিক চর্চা আবারো শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈসাবি উৎসব পার্বত্য অঞ্চলের সকল সম্প্রদায়কে এক করে দিয়েছে।পার্বত্য অঞ্চলের সকল সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব বৈসাবী উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ের প্রতিটি ঘরে ঘরে আনন্দ বয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে পার্বত্য অঞ্চলের এই উৎসবের মধ্যেমে পার্বত্য অঞ্চলে সকল সম্প্রদায়ের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হবে। পার্বত্য অঞ্চলের সকল সম্প্রদায় যাতে এক হয়ে সন্দুর একটি আগামীর বাংলাদেশ গড়তে পারে সেই দিকে আমাদের সকলের প্রত্যাশা থাকবে।বৈসাবীর উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর এই তিনদিনে আনন্দ উৎসবে মেতে থাকবে পার্বত্য অঞ্চলের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ। ঐতিহ্যবাহী পাঁজন রান্না করে অতিথি আপ্পায়নের মধ্যে দিয়ে মূল বিজুর আনুষ্ঠানিকতা। আগামী ১৬ এপ্রিল সাংগ্রাই জলোৎসবের মধ্যে দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।